সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ: পঞ্চায়েত (Panchayat) সদস্য। পাকা বাড়ির মালিক। সেই সঙ্গে অস্থায়ী সরকারি কর্মী। আর তাঁরই কিনা নাম রয়েছে আবাস যোজনার (Awas Yojona) তালিকায়! ঘটনাকে ঘিরে সরগরম রায়গঞ্জের মেহেন্দি গ্রাম এলাকা। গরিব গ্রামবাসীদের ক্ষোভ সামনে আসতেই, আবাস তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য।
আবাস যোজনায় ফের দুর্নীতি: টিনের চালা দেওয়া একতলা পাকা বাড়ি। আর সেই পাকা বাড়িরই চার দেওয়ালের বড় অংশ ঢেকে রাখা হয়েছে টিন দিয়ে এক ঝলকে দেখলে মনে হবে পুরোদস্তুর টিন দিয়ে ঘেরা বাড়ি। কিন্তু টিনের ছদ্মবেশে লুকিয়ে রয়েছে পাকা বাড়ি। আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এক পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ি-১ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায়। মেহেন্দি গ্রামের বাসিন্দা নীরদ বিশ্বাস কমলাবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের অস্থায়ী কর্মীও তিনি।
বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হলেও, পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে আবাস যোজনায় নাম তোলার অভিযোগে সরব হয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। ওই গ্রামের বাসিন্দা মনোতোষ বিশ্বাস বলেন, “সরকার গরিবের জন্য ঘর দিচ্ছে। গরিব ঘর পাচ্ছে না। যারা একবার দুবার ঘর পেয়েছে, তাদেরই দিচ্ছে। ওর নাম কী করে আসে। এখন চাপে পড়ে বলছে নাম বাদ দিতে বলেছি।’’
পাকা বাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও, আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর নাম থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য। তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। কমলাবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ও তৃণমূল কর্মী নীরদ বিশ্বাস বলেন, “প্রধান সাহেবকে বললাম আমার নাম বাদ দিলে ভাল হয়। যাঁদের পাওয়ার কথা তাদের নাম আসেনি। আমার নিজের খারাপ লাগছে। আমার নাম বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সরকারি অফিসে অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছি।’’
ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি সভাপতি বলেন বাসুদেব সরকার, “পাকা বাড়ি। সরকারি কর্মচারী। অথচ তাঁর নামেও আবাস যোজনার ঘর বরাদ্দ। অথচ তার আশেপাশে কুঁড়েঘরে থাকে, তার নাম নেই। জনপ্রতিনিধিরা সরকারি প্রকল্প যে লুটে খায় তৃণমূলের আমলে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ মেহেন্দিগ্রামের ঘটনা। বিজেপিতে করে খাওয়ার জায়গা নেই বলে যেখানে করে খাওয়ার জায়গা আছে সেখানে গিয়ে নাম লেখান।’’ কমলাবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও তৃণমূল নেতা প্রশান্ত দাস বলেন, “ওই পঞ্চায়েত সদস্য আবাস যোজনার তালিকা থেকে তাঁর নাম কেটে দেওয়ার জন্য ৬ ডিসেম্বর একটি আবেদন করেছেন। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও ব্যাপার নেই। বরং শাসকদলে এসে উনি সত্য সামনে এনেছেন।’’
সমীক্ষায় পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন মহকুমা শাসক। রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতি বলেন, “৩-৪ বছর আগে সার্ভে। তখন চাকরি করতেন কিনা জানি না। হতে পারে সার্ভেতে কোথাও গন্ডগোল থেকে গেছে। এখন আবার ফিল্টার করা হচ্ছে।’’ আবাসে দুর্নীতির বসত...। এর শেষ কোথায়? পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এখন যেন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: North 24 Parganas: কেন ভেঙে পড়ল ছাদ? বরানগরের ঘটনার নেপথ্যে প্রোমোটিং-যোগের অভিযোগ