সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ (উত্তর দিনাজপুর):   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  শান্তিনিকেতনের ধাঁচেই মুক্ত পরিবেশে খুদে পড়ুয়াদের  পঠন-পাঠনের  আয়োজন করলেন রায়গঞ্জের বেশ কয়েকটি  প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নাম দেওয়া হয়েছে " গাছতলায় পাঠশালা "।  প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের, যাদের অনলাইনে পড়াশুনা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই,  তাদের নিয়েই এই গাছতলায় পাঠশালা বসেছে রায়গঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে। গ্রামগঞ্জের মাঠে খোলা আকাশের নীচে, গাছের ছায়ায়। শিক্ষক মহাশয়রা নিজেদের অর্থেই কিনে আনছেন খাতা কলম ও টিফিন। পাঠদানের পাশাপাশি পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করছেন শিক্ষার সরঞ্জাম ও খাবার। আর শিক্ষকদের এই আয়োজনে যারপরনাই খুশি দিন আনি দিন খাই পরিবারের খুদে পড়ুয়ারা।


দীর্ঘ দেড় বছর ধরে অতিমারি করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে সমস্ত স্কুল কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  স্কুল বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের। শহরের স্কুলগুলোতে অনলাইনে ক্লাস চালানো সম্ভব হলেও প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের সেই সুযোগ থাকে না। তাদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া।  তাদের পরিবারের বাবা-মা পেটের তাগিদে কাজে চলে যান। পড়ুয়াদের পড়াশোনা দেখানোর মতো সক্ষমতাও তাঁদের থাকে না। ফলে পড়াশোনা থেকে একেবারে দূরে চলে যাচ্ছিল প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা।  মূলত তাদের পড়াশোনার মধ্যে ধরে রাখার উদ্দেশ্যেই  রায়গঞ্জ শহরের বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা এই " গাছতলায় পাঠশালা " কর্মসূচি বেছে নিয়েছেন। গ্রামের কোনও মাঠের গাছের তলায় সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে তাদের বসিয়ে পাঠদান করছেন তাঁরা।  গাছের সাথে ব্ল্যাকবোর্ড টাঙিয়ে শ্রেণীকক্ষের মতোই পড়াচ্ছেন শিক্ষকেরা। খোলা আকাশের নীচে গাছের ছায়ায় বসে মুক্ত পরিবেশে পাঠদান করে যেমন আনন্দ পাচ্ছেন পাঠশালার গুরুমশাইয়েরা তেমনি প্রবল উৎসাহের সঙ্গে মন দিয়ে শিখছেন  শিষ্যরাও। পড়া শেষে শিক্ষকদের হাত থেকে উপহার পেয়ে খুশী গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খুদে পড়ুয়ারা।
করোনা আবহে স্কুল বন্ধ। কিন্তু গাছতলার এই পঠনপাঠনে নিঃসন্দেহে এই পড়ুয়ারা অনেকটাই উপকৃত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।