সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে (raiganj medical college) চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। প্রতিবাদ করায় রোগীর আত্মীয়দের মারধরের অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল চত্বরে তীব্র উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। বৃহস্পতিবার দেড় বছরের একটি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ , শিশুর চিকিৎসার বদলে ক্রিকেট দেখতে ব্যস্ত ছিলেন কর্তব্যরত জুনিয়ার ডাক্তাররা। শিশুর আত্মীয়রা এই নিয়ে অভিযোহ করলেই হামলা হয় তাঁদের ওপর। ঘটনাস্থলে গিয়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের হামলার শিকার হন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী চৈতালি ঘোষ সাহা। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার।


বচসা, ধস্তাধস্তি, গালিগালাজ, মারমুখী মেজাজ, তুমুল বিশৃঙ্খলা- সবটাই হয়েছে সরকারি হাসপাতালের ভিতরে।  চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঘিরে বৃহস্পতিবার রাতে ধুন্ধুমার হল রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অশান্তি এমন জায়গায় পৌঁছল, মহিলা মেডিসিন বিভাগের ভিতরে ঢুকে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লাঠি উঁচিয়ে সরাতে হল যুযুধান দু'পক্ষকে। এখানেই শেষ নয়, রোগীর পরিবার ও তাঁর প্রতিবেশীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। রোগীর পরিবার-পরিজনের বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 


উত্তর দিনাজপুর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী চৈতালি ঘোষ সাহা ওই অসুস্থ শিশুর আত্মীয়। তাঁর অভিযোগ, 'ওঁরা এসে, ছেলেরা,  জুনিয়র ডাক্তাররা এসে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে। এসে আমাদের মারছে। আমার চশমা ভেঙে দিয়েছে। আমার গায়ে হাত দিয়েছে। আমার ব্রেসলেট ছিঁড়ে দিয়েছে। আমার হাতে মেরেছে।'


রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল কৌশিক সমাজদার বলেন, 'আমাজের ডাক্তাররা কাজ করছিলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা ওয়ার্ডে কাজ করছিলেন। তো সেই সময় পেশেন্ট পার্টি বিনা প্ররোচনায় ডাক্তারদের মারধর করে। আমাদের ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার আহত হয়েছেন। তাঁরা ভর্তি আছেন।'


দেড় বছরের সন্তানের পেটব্যথার উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রাজা মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে এসেছিলেন প্রতিবেশী ও উত্তর দিনাজপুর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী। তাঁদের অভিযোগ, অসুস্থ শিশু পেট ব্যথায় কাতর হয়ে পড়া সত্ত্বেও, মোবাইল ফোনে ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখতে ব্যস্ত ছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎকরা। চিকিৎসা নিয়ে গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখিয়েছেন তাঁরা।


চৈতালি ঘোষ সাহা বলেন, 'আমি এটা দেখছি, উনি কী দেখছেন? দেখছি, সামনে মোবাইল রেখে উনি টিকিটটা দেখছেন, টিকিটে কোনও মন নেই। দেখার পর ডাক্তারবাবু আবার জিজ্ঞেস করলেন, ওজন কত? আমি বললাম, ১৭ কিলো ১০০ ডাক্তারবাবু। আপনি মোবাইলটা বন্ধ করে বাচ্চাটাকে আগে পরিষেবা দিন। কারণ বাচ্চাটার চরম পেট ব্যথা। ডাক্তারবাবু আমাকে গরম দেখায়। আমাকে বলে, আপনি কে, আপনি কে?' অসুস্থ শিশুর বাবা বলেন, 'ছয়তলাতে নিয়ে গিয়েছি। জুনিয়র ডাক্তাররা ছিল। সব খেলা দেখছে। মানে, ফোনে খেলা দেখছে। তখন বললাম, স্যর, কোনওরকম আপনি ট্রিটমেন্ট তো শুরু করুন। পরে তো আপনারা দেখবেন, কী হয়েছে না হয়েছে। বলার পর বলল, ১৯ নম্বর বেডে ভর্তি করো, ১৯ নম্বর বেডে রাখো। ১৯ নম্বর বেডে নিয়ে গিয়েছি, দেখি অলরেডি একজন পেশেন্ট শুয়ে রয়েছে। তা আমি আবার গিয়ে বললাম, ডাক্তারবাবু এই ১৯ নম্বর বেডে তো একজন শুয়ে আছে, কোথায় রাখব? বলছে, দাঁড়ান দেখছি। এই করতে করতে, আধধণ্টা ধরে উনি খেলা দেখছেন।'


এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ রায়গঞ্জ মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তাররা। আউটডোর বিভাগ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন তাঁদের একাংশ। তার জেরে শুরু হয়েছে রোগী-হয়রানি। ক্যানসার আক্রান্ত মা-কে নিয়ে এসেছিলেন অনুরাধা পাল। তিনি বলেন, 'মায়ের, কেমো পেশেন্ট তো, কেমো চলছে। তা কেমোর জন্য নিয়ে এসেছিলাম। আউটডোর বন্ধ আছে। ডাক্তাররা বললেন, মঙ্গলবার আসতে।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 

আরও পড়ুন: ছাদ ভাঙার পরেই ঘটনাস্থলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কেন এমন ঘটনা? কী বললেন তিনি?