অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ড্রাই ফ্রুটস খেয়ে থাকেন। তবে জানেন কি অতিরিক্ত ড্রাই ফ্রুটস-এ ক্যালোরির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সারাদিন পর্যাপ্ত খাবার না খেয়ে যদি ভাবেন মুঠো মুঠো ড্রাইফ্রুটস খেয়েই ওজন কমবে। তবে একেবারেই ভুল ভাবছেন। এবিপি লাইভকে ড্রাই ফ্রুটস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিলেন পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি। নিউট্রিশন উইকে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন নিয়ম মানলে ড্রাই ফ্রুটস-এর সঠিক পুষ্টিগুণ পাবেন আপনি। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজনও।
ড্রাই ফ্রুটস কি ওজন বাড়ায়? ড্রাই ফ্রুটস খেলে ওজন বাড়বে বা কমবে, নির্দিষ্ট করে কোনওটাই বলা যায় না। এগুলো একাধিক কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন আপনি দিনে কতটা ড্রাই ফ্রুটস খাচ্ছেন? তার সঙ্গে পর্যাপ্ত পুষ্টি মিলছে কি না এমন অনেকগুলো ফ্যাক্টর এ ক্ষেত্রে কাজ করে। পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি বলছেন, 'প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করার ফলে ড্রাই ফ্রুটস থেকে জল বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি এতে শর্করার পরিমাণও বেশি থাকে। কাজেই তাজা ফলের তুলনায় ড্রাইফ্রুটস অনেক বেশি ক্যালোরিযুক্ত। তাই ক্যালোরির হিসাব না করে অতিরিক্ত ড্রাই ফ্রুটস খেলে ক্যালোরি বাড়তে পারে। তবে, শুকনো ফলে প্রচুর স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, ভিটামিন, মিনেরেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ফলিফেনল, ফোলেটও। এই পুষ্টিগুলি হজম, হৃদরোগ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ার আর কোন কোন দিক মেনে চলবে
পরিমাণের দিকে নজর দিন: মুঠো মুঠো ড্রাই ফ্রুটস খাবেন না। পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন। সারাদিনে ২৮ গ্রাম মতো ড্রাই ফ্রুটস খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঢুকবে না।
ডায়েট ঠিক রাখুন: সারাদিন ঘুরতে ফিরতে শুধুই ড্রাই ফ্রুটস খেয়ে চলেছেন এমনটা করবেন না। খেয়াল রাখুন আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে যেন পর্যাপ্ত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট থাকে। সবুজ শাক-সবজি, শষ্যদানা খান।
ক্যালোরি মেপে খান: আপনার নির্দিষ্ট ডায়েটের জন্য অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। তিনি ক্যালোরি মেপে চার্ট বানিয়ে দেবেন। ওজন, উচ্চতা, বয়স, শারীরিক গঠন অনুযায়ী প্রত্যেকে ক্যালোরির চাহিদা ভিন্ন হয়। কাজেই অন্যের ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ার ধরন দেখে প্রভাবিত না হওয়াই ভাল।
ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন চেষ্টা করুন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করার। না পারলে হাঁটুন।
যখন তখন ইচ্ছে মতো ড্রাই ফ্রুটস খাবেন না। চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি, বলছেন ওজন, ক্যালোরি ইত্যাদি ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ড্রাই ফ্রুটস খান, কীভাবে খাবেন? দেখে নিন।
- আপনার ডায়েটের একটা পার্ট হিসেবে রাখুন ড্রাই ফ্রুটসকে বা দিনের একটা স্ন্যাক্সে ড্রাই ফ্রুটস খান।
- হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে এবং রক্তে শর্করার বৃদ্ধি রোধ ড্রাই ফ্রুটসের সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং গুড ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার খান।
- ডায়াবেটিসের সমস্যা এড়াতে মিষ্টি নেই এমন ড্রাই ফ্রুটসই খান
কারা একেবারেই ড্রাই ফ্রুটস খাবেন না?
- দু-বছরের কম বয়সী শিশুদের বাদাম এবং অন্যান্য় ড্রাই ফ্রুটস দেবেন না। এতে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি চিবিয়ে খেতে গিয়ে গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে ডায়েটে বাদাম জাতীয় ড্রাই ফ্রুটস রাখবেন না।
- যেহেতু বাদাম এবং শুকনো ফলে ক্যালোরি বেশি, ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা অতিরিক্ত বাদাম, কিশমিশ খাবেন না। খেলেও অল্প পরিমাণে খান।
- যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে তাঁরা সল্টেড ড্রাই ফ্রুটস এড়িয়ে চলুন। এতে সোডিয়াম বেশি থাকে।
- ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন ড্রাই ফ্রুটস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ শতাংশের বেশি আর্দ্রতায় ড্রাই ফ্রুটস থাকলে তাতে ফাঙ্গাস উৎপন্ন হয়। এই ফাঙ্গাস থেকে উৎপন্ন হয় মাইকোটক্সিন। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এতে লিভার ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে। আপনার পোষ্যর ক্ষেত্রেও এটি মেনে চলুন।
- যাদের অন্ত্রের সমস্যা যেমন ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল সিনড্রোম রয়েছে তাঁরা ড্রাই ফ্রুটস খাবেন না। কারণ এতে থাকা উচ্চ ফাইবার অন্ত্রে প্রদাহ তৈরি করতে পারে।
ডায়েটে অবশ্যই যেই ড্রাই ফ্রুটসগুলো রাখবেন
খেজুর:খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, পটাশিয়ামের মতো পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর। এতে সালফারের পরিমাণও পর্যাপ্ত মাত্রায় রয়েছে।
কিশমিশ: কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন। ভেজানো কিশমিশ খেলে ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে। রক্তাল্পতার সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে ভেজানো কিশমিশ।
কাঠবাদাম: ভিটামিন, ফাইবার, ফ্যাট, মিনারেলস রয়েছে বাদামে। রক্তচলাচল সচল রাখতে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে রোজের খাবারে রাখতেই পারেন কাঠবাদাম। সকালে উঠে একটা করে ভেজানো কাঠবাদাম খেতে পারেন।