বিটন চক্রবর্তী, কোলাঘাট: কেউ দিনমজুরের কাজ করতেন। কেউ আবার ট্রেনে ফেরি করতেন জল। সেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছে। প্রাণ চলে গিয়েছে প্রায় ৩০০ মানুষের (Odisha Train Accident )। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ হাজারের কোটা। গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই ঘটনা। ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না কোলাঘাটের মানুষজন। গ্রামের তিন যুবকও বলি হয়েছেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে (Kolaghat News)। 


পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের নামালবাড় গ্রাম (Purba Medinipur News)। শুক্রবার অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন গ্রামের তিন যুবক। গন্তব্য ছিল ওড়িশার ভুবনেশ্বর। সেখানে মোজাইক পাথরের কাজে হেল্পার হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। খড়্গপুর থেকে চেপেছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। 


কেউ করতেন দিনমজুরের কাজ, কেউ আবার ট্রেনে ফেরি করতেন জল। কিন্তু সেই ট্রেনই যে গ্রামের তিনযুবকের প্রাণ এভাবে কেড়ে নেবে তা যেন বুঝে উঠতে  পারছেনা কোলাঘাটের নামালবাড়ের বাসিন্দারা। একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও খোঁজ মেলেনি অন্য দুজনের। তাদের মদ্ধ্যে একজনের মৃতদেহ আবার অন্য কেউ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করছে পরিবার। শেষমেষ ডিএনএ-টেস্টের মাধ্যমে মৃতদেহ পাওয়ার আশায় দিন গুনছে কোলাঘাটের দুই পরিবার।


আরও পড়ুন: Coromandel Express: ভয়াবহতার রেশ কাটেনি এখনও, আজ ফের ট্র্যাকে ফিরছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস


পূর্ব মেদিনীপুর জেলার  কোলাঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একই গ্রামের তিনজন গত শুক্রবার রওনা দিয়েছিল ওড়িশার ভুবনেশ্বরের উদ্দেশে। কিন্তু সেই যাওয়া, শেষ যাওয়া হয়ে গিয়েছে। না গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন তাঁরা, না ফিরতে পেরেছেন ঘরে। দুর্ঘটনার তিন দিনের মাথায় খোঁজ মিলেছে তাঁদের মধ্যে এক যুবক, জইদুল পাখিরার (৩১) দেহের। বাকি দুই যুবক, জহুর আলি (৩৫) এবং জয়নাল পাখিরার (৪১) মৃতদেহের খোঁজ মিললেও, তা হাতে পেতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। 


ওই তিন জন একসঙ্গেই রওনা দিয়েছিলেন শুক্রবার। ভুবনেশ্বরে একই সঙ্গে কাজ করতেন। পরিবারের সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল বালেশ্বর স্টেশনে ট্রেন ঢোকার আগে। তার পরই পরিবারের লোকজন জানতে পারেন ট্রেন দুর্ঘটনার কথা। লাগতার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, পাওয়া যায়নি। বন্ধ ছিল ফোন। শেষ মেশ সোমবার রাতে জইদুলের দেহ গ্রমে পৌঁছয়।  বাকি দু'জনের দেহ এখনও হাতে আসেনি। 


জহুরের পরিবার জানিয়েছে, ফোন করে ওড়িশা প্রশাসন মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায়। একটি ছবিও পাঠানো হয়, যা দেখে জহুরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। কিন্তু দেহ আনতে গেলে জটিলতা দেখা দেয়। বিহারের এক পরিবার ওই একই দেহ পেতে দাবি জানায়। তার পর DNA পরীক্ষার উপায় বের করে স্থানীয় প্রশাসন। জহুররে বাবা এবং ভাইকে তার জন্য যেতে হয় ওড়িশা।


অন্য দিকে, জয়নালের দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে গিয়েছে। পরনের পোশাক দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন। তাঁর দেহ হাতে পাওয়া নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। DNA পরীক্ষা হচ্ছে তাঁর ক্ষেত্রেও। কিন্তু এখনও তার রিপোর্ট আসেনি। ছেলে তো নেই, তার উপর দেহ নিয়েও টানাপোড়েন। শোকে কার্যতই পাথর গোটা পরিবার।