কলকাতা: স্বামী বিবেকানন্দের ১৬১তন জন্মবার্ষিকী। সেই উপলক্ষ্যে ঘুরে ঘুরে মূর্তিতে মাল্যদান করলেন বিজেপি নেতৃত্ব (Swami Vivekananda Birth Anniversary)। কিন্তু দিনভর কার্যত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) বন্দনাতেই মগ্ন রইলেন তাঁরা। মোদিরূপেই বিবেকানন্দ ফের ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে বুক ঠুকে ঘোষণা করে দিলেন কেউ। কেউ আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন, নরেন্দ্রর সঙ্গে নরেনের নামের মিলও রয়েছে বলে। তা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। 


বিবেকানন্দের জন্মদিনে দিনভর মোদি-বন্দনা বিজেপি নেতাদের


বৃহস্পতিবার প্রথম এ নিয়ে বিতর্ক বাধান বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Saumitra Khan)। তিনি বলেন, "স্বামীজি নবরূপে নরেন্দ্র মোদি হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে আমার মনে হয়।  স্বামীজি আমাদের কাছে ভগবানতুল্য, ভগবান। কিন্তু নরেন্দ্র মোদিও মাতৃবিয়োগের পর যে ভাবে দেশের সেবা করছেন, দেশের সেবায় জীবন দিচ্ছেন, তাতে আমার মনে হয়, আধুনিক ভারতে নববরূপে এসেছেন স্বামীজি।"


সেই নিয়ে বাগযুদ্ধ শুরু হলেও থামেননি সৌমিত্র। তার পরেও তাঁকে বলতে শোনা যায়, "ভারতের জন্য যা করেছেন মোদি, তার জন্য আজ থেকে ৫০-১০০ বছর পরেও পূজিত হবেন। বিলে নরেন ছিলেন, আমাদের নরেন্দ্র মোদিও নরেন, দু'জনের একই কাজ। এই নরেনই সেই নরেন, যাঁর জন্য ১০০ বছর ধরে ভারত প্রতীক্ষায় ছিল। বাঙালি বিবেকানন্দর পাশে ছিল না। শিকাগো বক্তৃতার পরে আলোচনা শুরু হয়। যে ভাবে নরেন্দ্র মোদি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, ৫০-১০০ বছর পরেও পূজিত হবেন।"


সৌমিত্রর মতো সরাসরি মোদিরূপে বিবেকানন্দ ফের ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছেন না বললেও, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Majumdar) মুখেও শোনা যায় মোদি-স্তুতি। তিনি বলেন, "স্বামীজির ভক্ত প্রধানমন্ত্রী। দু'জনের নামের মিলও রয়েছে।" সৌমিত্রের মতো তাহলে কি তিনিও মনে করেন যে, মোদিরূপে ফিরে এসেছেন বিবেকানন্দ! প্রশ্নের জবাব দেননি সুকান্ত। জানান, যা বলার বলে দিয়েছেন। 


আরও পড়ুন: Saumitra Khan: মাতৃবিয়োগের পরও দেশসেবায় ব্রতী, মোদিরূপে ধরাধামে ফিরেছেন বিবেকানন্দ, সৌমিত্রের মন্তব্যে বিতর্ক


তবে বিজেপি নেতাদের এমন মোদি-বন্দনায় চটেছেন তৃণমূল (TMC) থেকে সিপিএম (CPM) নেতারা। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, মূর্খ, ভবিষ্যৎ বক্তারা এমনই কথা বলে থাকেন। এ সবে গুরুত্ব দেওয়া অর্থহীন। বিবেকানন্দ বলতে সেই মনীষীকে বুঝি আমরা, নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। ভারতকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সামাজিক অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সারা জীবন কাজ করেছেন। তাঁকে এভাবে মাটিতে নামিয়ে আনা মূর্খরা ছাড়া কেউ করতে পারে না। এঁদের উপেক্ষা করাই শ্রেয়। কারণ আমাদের সমাজে এমন মূর্খের সংখ্যা নেহাত কম নয়।"


বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে


সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়িও সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তাঁর কথায়, "বিজেপি-র অবস্থা তো একটু খারাপ হচ্ছে! তাই নিজের পয়েন্ট বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সে বাড়ান। কিন্তু বিবেকানন্দকে অপমান করার অধিকার ওঁকে কে দিল? আসলে বিবেকানন্দ হোন বা রবীন্দ্রনাথ, বা যে কোনও মনীষী নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এঁরা ওঁদের ব্যবহার করেন। মনীষীদের জীবনী এঁরা পড়েননি, কিছু জানেন না মনীষীদের সম্পর্কে, জানার আগ্রহও নেই। শুধুমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার্থে ব্যবহার করেন। বিজেপি-র অন্দরে পয়েন্ট বাড়ানোর জন্য বোকার মতো কথা বলছেন। কিন্তু স্বামীজিকে অপমান করার অধিকার বিজেপি-কে কেউ দেয়নি।"