প্রকাশ সিন্হা, হিন্দোল দে ও মনোজ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে ESI হাসপাতালকে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ার নির্দেশ দিল ED-র বিশেষ আদালত। শুক্রবার, আদালতে ED অভিযোগ করে, সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে টালবাহানা করছে SSKM। সেই প্রেক্ষিতেই এবার এই নির্দেশ দিল আদালত।
কেন্দ্রীয় হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ সম্ভব বলে জানালে, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে অবিলম্বে ED-র হাতে তুলে দিতে হবে SSKM হাসপাতালকে। এবার এমনই নির্দেশ দিল ED-র বিশেষ আদালত।
SSKM ছাড়তে হবে কালীঘাটের কাকুকে? নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে ESI হাসপাতালকে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ার নির্দেশ দিয়েছে ED-র বিশেষ আদালত। কলকাতা পুলিশকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছে, পুলিশ না পারলে, সুজয়কৃষ্ণকে ESI হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা দিতে পারে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
৯৫ দিন ধরে এসএসকেএম মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু! তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য় বারবার হাসপাতালে গেছে ইডি, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার, আদালতে ED অভিযোগ করে, সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে টালবাহানা করছে SSKM। ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করানোরও অভিযোগ তোলে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। SSKM-এর মেডিক্যাল বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
এই প্রেক্ষিতে ESI হাসপাতালের ডিনকে কার্ডিওলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট এবং ENT বিশেষজ্ঞকে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ আদালত।
শুধু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রই নন, কালীপুজোর দিন, প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পর থেকে নিজেকে অসুস্থ বলে দাবি করে, SSKM হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বায়না ধরেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক! সূত্রের খবর, সেল দেখে তিনি বলেন, আমি রাজ্যের মন্ত্রী! জেল রাজ্য সরকারের আওতায়। আমি এই সেলে থাকব না। আমার শরীরের বাঁ দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাকে SSKM-এ পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এরপর, ২১ নভেম্বর থেকে SSKM-এই রয়েছেন তিনি।
যদিও এই বিতর্ক নতুন নয়। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম থেকে ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, সাম্প্রতিক অতীতে শাসকদলের একাধিক নেতা এসএসকেএমের আশ্রয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব সফলভাবে এড়িয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষ হিসেবে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের ভূমিকায় আমরা খুশি নই।
শাসক দলের ছাতার তলায় থাকা এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক পটভূমি রয়েছে - তেমন রাজনৈতিক নেতারা যখনই বুঝেছেন যে তাদের আর জিজ্ঞাসাবাদ হবে না, তখনই তাঁরা এসএসকেএম থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
এসএসকেএমের মেডিক্যাল রিপোর্টকে হাতিয়ার করে আদালতের হাজিরাও এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এর পর এয়ার অ্যামবুল্যান্সে করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম থেকে ভুবনেশ্বরের AIIMS-এ নিয়ে যাওয়া হয়। AIIMS পরীক্ষার পর জানিয়ে দেয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তি করার কোনও প্রয়োজন নেই। যা নিয়ে তখন প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েছিল SSKM। অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে অবশ্য এসএসকেএম আর ভর্তিই নেয়নি তাঁকে।
জেলের আসামিদের জন্য SSKM এখন বিশ্রামাগারে পরিণত হয়েছে। এই অভিযোগ তুলে এদিন SSKM-এর সামনে বিক্ষোভ দেখায় দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস।