রানিনগর : মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) রানিনগরে শাসকের হামলা রুখতে একজোট বিরোধীরা। একই টোটোয় চড়ে নিজেদের দলের পতাকা নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে গেলেন সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি প্রার্থীরা। মার খেলে প্রতিরোধ হবে, বার্তা বিরোধী প্রার্থীদের। একই সঙ্গে তৃণমূলের মতোই কমিশনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে বাম, কংগ্রেস, বিজেপিকে বাইক র‍্যালি করতে দেখা যায়। আজও মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বাইক ‍র‍্যালি করে তৃণমূল। গতকালও একই জায়গায় দেখা গিয়েছিল লাঠি, বাঁশ হাতে তৃণমূলের বাইক-বাহিনীর দাপাদাপি। কমিশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পরপর দু'দিন শাসক দলের বাইক ‍র‍্যালি হল।


মনোনয়ন ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি-


কোথাও মারধর, কোথাও রক্তপাত, কোথাও প্রাণহানি। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই, সপ্তমে অশান্তির পারদ। যা দেখে অনেকে বলছেন, এ তো আঠেরোর পুনরাবৃত্তি !


প্রথমে ২ রাউন্ড গুলি, তারপর শাবল দিয়ে আঘাত, হাঁসুয়া দিয়ে কোপ। শেষে, একেবারে সামনে এসে পরপর ৬টা গুলি ! পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্য়ে, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে শুক্রবার বিকেলে এভাবেই কংগ্রেসকর্মী ফুলচাঁদ শেখকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। কংগ্রেস কর্মীকে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার, মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিনেই খুন হন কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। ঘটনার পর থেকে থমথমে গোটা গ্রাম। 


শুধু কী মুর্শিদাবাদে ? মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির আবহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে গতকালই উত্তেজনা ছড়ায় পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয়। মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলে আক্রান্ত হয় সিপিএম। মিনাখাঁয় হামলায় মাথা ফাটে একজন সিপিএম নেত্রীর। তৃণমূলের হামলা এবং ইটবৃষ্টিতে, জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন সিপিএম কর্মী। আহত হন, একাধিক পুলিশকর্মীও ! পাল্টা, আক্রমণের পথে হাঁটে সিপিএমও।


সোনামুখী থেকে পাণ্ডুয়া... কিংবা জামুড়িয়া। মনোনয়ন ঘিরে দিকে দিকে আক্রান্ত বিজেপিও। সোনামুখীতে মাথা ফাটে বিজেপির মণ্ডল সম্পাদকের। বিজেপি বিধায়ককে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জামুড়িয়ায় বিজেপি প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। পাণ্ডুয়ায় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন লকেট চট্টোপাধ্য়ায়। 


এদিকে মনোনয়ন ঘিরে আজ ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ভাঙড়। পুলিশি নিরাপত্তায় মোড়া বিডিও অফিসের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিজয়গঞ্জ বাজারে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমাবাজি হতে থাাকে। শতাধিক বোমা ও ৭ রাউন্ড গুলি চলে বলে অভিযোগ। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি ও ইটবৃষ্টি হয়। বোমার মুখে পিছু হঠে পুলিশ। রক্তাক্ত হন কাশীপুর থানার এক এসআই। বোমার স্প্লিন্টারে এক আইএসএফ কর্মী আহত হন বলে দাবি। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ।


আইএসএফ প্রার্থীদের অভিযোগ, মনোনয়ন আটকাতে তাঁদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির দাবি, বোমাবাজির খবর দিতে আসায় তাঁকে আটক করা হয়েছে। বোমা বাঁধার সময় আটক, দাবি পুলিশের। ভাঙড়ের বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকির দাবি, তাঁদের প্রার্থীদের মনোনয়ন আটকাতেই তৃণমূল হামলা চালায়। ভাঙড়ের ঘটনায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন।


এই পরিস্থিতির মধ্যে এবার মনোনয়ন ঘিরে একজোট হলেন বিরোধীরা। জোট বেঁধে গেলেন মনোনয়ন জমা দিতে।