শিবাশিস মৌলিক, অনির্বাণ বাগচী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, শাসন : শাসনে ভোটের আগেই তৃণমূলের 'শাসন' ! বিষ্ণুপুর মহকুমায় প্রায় ৬৬ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে শাসকদল ! ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটিতে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। স্ক্রুটিনি শুরু হতেই একের পর এক জেলায় সামনে আসছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকের জয়ের ছবি ! যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


উত্তর ২৪ পরগনা থেকে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়া, মনোনয়ন জমার সময়সীমা শেষের পর স্ক্রুটিনি চালু হতেই একাধিক জেলা থেকে আসতে শুরু করেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের জয়ের খবর ! উত্তর ২৪ পরগনার শাসন জুড়ে কার্যত শুধু তৃণমূলের শাসন ! শুরুর আগেই খেলা 'শেষ' শাসনে ! শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ২৯টি। মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে, কেবল মাত্র তৃণমূলই সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বিরোধী কোনও দলই প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে ভোটের আগেই শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের শাসনভার চলে গেছে তৃণমূলের হাতে !

পঞ্চায়েতের মননোয়ন ঘিরে গত কয়েকদিনে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। শুধু ভাঙড়েই প্রাণ গিয়েছে তিনজনের। পরিসংখ্যান বলছে, ভাঙড়েরই এক নম্বর ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টিতে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। বাকি দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথমটিতে মাত্র একটি ও দ্বিতীয়টিতে দুটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিরোধী দলগুলি !


মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ দু'নম্বর ব্লকে এবারও পঞ্চায়েত ভোটে অব্যাহত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ধারা ! ভোটের আগেই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়ে গেল তৃণমূল ! শনিবার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনি শেষ হতেই অকাল হোলিতে মাতলেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা !

রঘুনাথগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের গিরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের একটিতেও তৃণমূল বাদে অন্য কোনও দল প্রার্থী দিতে পারেনি।
সেকেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫টি আসনের মধ্যে ১৬টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে শাসকদল। ফলে, ভোটের আগেই এই গ্রাম পঞ্চায়েতেও দখল নিয়েছে তৃণমূল ! এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা বাকি রয়েছে।


এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "সন্ত্রাস করেছে। পারছে না আমাদের লোকেরা। কোথাও পেরেছে, আবার কোথাও পারিনি আমরা। যেখানে যেখানে রুখতে পারিনি, সেখানে সেখানে লুঠ হয়ে গেছে, মানে ভয়ে কেউ এগোতে পারেনি। রঘুনাথগঞ্জে যেমন ঘটনা ঘটেছে সেকেন্দ্রা গিরিয়া, জানি আমরা। কারণ সেখানটায় পারেনি আমাদের লোকেরা। সব জায়গায় তো সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি আমরা। যেখানে যেখানে পেরেছি, সেখানে সেখানে লড়ছি।"

জঙ্গলমহলের দুই জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতেও দেখা গেছে একই ছবি ! বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমায় মোট ৫৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাস ও পাত্রসায়ের, এই চারটি ব্লকের ৩৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হল তৃণমূল ! এই মহকুমার ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে চারটিই ভোটের আগেই শাসকদলের দখলে চলে এসেছে। এই খবর সামনে আসার পরই এদিন উল্লাসে মাতেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা।


অথচ ২০১৯-এ এই বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনেই জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির সৌমিত্র খাঁ ! ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও এই বিষ্ণুপুর মহকুমার সোনামুখী, ইন্দাস, কোতুলপুর ও বিষ্ণুপুর-এই চারটি বিধানসভায় জয়ী হয় বিজেপি। পুরুলিয়ায় এখনও পর্যন্ত দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতটি আসনে এবং পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিনা লড়াইয়েই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।


জেলায় জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় তৃণমূলের। শাসক-সন্ত্রাস ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছে বিরোধীরা। যদিও তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'সারা বাংলায় বিরোধীদের অস্তিত্ব সেভাবে নেই। শুধুমাত্র কিছু পকেটে রয়েছে। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে সেখানে লড়াই হবে। আমি তো বলেছি মানুষের কাছে যেতে হবে কর্মীদের। সেবা করুন। সেবা করলেই তারা আমাদের দিকে থাকবেন।'

২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল।