বিটন চক্রবর্তী, পাঁশকুড়া: আজ তার কোল খালি। ছেলেটা চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে লিখে গিয়েছিল ‘মা আমি বলে যাচ্ছি, যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। চুরি করিনি।’কিন্তু এখন সেই মায়ের কোল খালি। সারা জীবন এই শূন্যতার ভারই বুকে বয়ে বেড়াতে হবে তাঁকে। শেষ স্মৃতি আঁকড়ে বারে বারে ডুকরে উঠছেন তিনি। বলার চেষ্টা করছেন অনেক কিছু । কিন্তু গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। বললেন, ছেলেটা দোকানে গিয়ে অনেকবার ডেকেছে। ডাকার পরে দেখে রাস্তায় চিপস দুটো পড়ে আছে। দোকানের সাইডে। চিপস গুলি কুড়িয়েও অনেকবার ডেকেছে। সাড়া দেয়নি কেউ। তখনই সাইকেল চালিয়ে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পরে তাকে ধাওয়া করা হয়। চোর চোর বলে লাঞ্ছনা করা হয়। কানধরে ওঠবোসও করানো হয়। মারে। ভয় দেখায়,'বাবা-মাকে নিয়ে যাবে,আমি পুলিশ। ...জেলে ধরিয়ে দেব বলেছে 'বলতে বলতেই আবার হাহাকার করে ওঠেন মা।
‘মা আমি বলে যাচ্ছি, যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। চুরি করিনি।’ এই কথাটাই নিজের খাতায় শেষবারের মতো মাকে এটাই লিখেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের সপ্তম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসার পর দেখা যায়, সে সত্য়িই বলেছিল। কিন্তু এখন সত্য়ি-মিথ্য়ার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে সে। রয়ে গিয়েছে শুধুই স্মৃতি আর আফশোস। আর মায়ের খালি কোল। চুরির অপবাদে, গঞ্জনায় অপমানে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে ক্লাস সেভেনের ছেলেটা। সে চলে যাওয়ার পর দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় একটুও মিথ্যে বলেনি সে।
সিসিটিভিতে দেখা যায়, সাইকেল নিয়ে দোকানের সামনে পৌঁছয় সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। তারপর সাইকেল থেকে নামে। সেখানেই দোকানের সামনে পড়ে ছিল চিপসের প্য়াকেট । তারপর সে দোকানের ভিতরে ঢোকে। তখনও বাইরেই পড়ে চিপসের প্য়াকেট। তারপর পড়ে থাকা সেই চিপসের প্য়াকেটটি কুড়িয়ে নিয়ে সাইকেলে চেপে চলে যেতে দেখা যায় তাকে।
পাড়ার দোকানেই চিপসের প্য়াকেট চুরির অপবাদে কানধরে ওঠবোসও করানো হয় বলে অভিযোগ। তারপরই কীটনাশক খায় সে। চারদিন পর মৃত্য়ু হয় তার । শুক্রবার রাতে দেহ বাড়ি পৌঁছতেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। ভাঙচুর করা হয় অভিযুক্তর বাড়ি। ঘটনার জেরে এখনও থমথমে এলাকা।
অভিযুক্ত দোকানদারের পরিবারের সদস্য়ের দাবি, স্থানীয়রা বাচ্চাটির দেহ তাদের বাড়িতে হাঙ্গামা চালিয়েছে। পড়ে থাকা একটি লাঠিও দেখান তিনি। ডিজেল-পেট্রল পড়ে আছে বলে দাবি করেন ওই মহিলা... চোর অপবাদ দিয়েছি... এগুলো সম্পূর্ণ ভূল। চক্রান্ত করে কিছু কিছু মানুষ করাচ্ছে ।