কলকাতা: ব্যস্ত সময়ে নিজ নিজ কাজে মগ্ন মানুষ জন। আচমকাই সেখানে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টি (Park Circus Shooting)। আমেরিকা-সহ পশ্চিমনি দেশগুলিতে এ যাবৎ এমন ভূরি ভূরি ঘটনা সামনে এলেও, খাস কলকাতার বুকে এই প্রথম। তাই শুক্রবার পার্ক সার্কাসে, বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে পুলিশকর্মীর এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টির ঘটনায় স্তম্ভিত শহরবাসী। ভরদুপুরে এমন নৃশংস ঘটনায় যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে, ওই পুলিশকর্মী মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কিনা। নিশ্চিত ভাবে এখনও পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি। গোটা বিষয়টিই তদন্তের রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু ছুটি কাটিয়ে কাজে ফিরে আছমকা এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাতে গেলেন কেন তিনি, তা নিয়ে কৌতূহলও দেখা দিয়েছে (Mental Depression)।
দিনে দুপুরে এলোপাথাড়ি গুলি পার্ক সার্কাসে
যে পুলিশকর্মী এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁকে চোডুপ লেপচা বলে জানা গিয়েছে। কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, এক বছরও হয়নি কলকাতা পুলিশে চাকরি পান লেপচা। সম্প্রতি ছুটিতে গিয়েছিলেন। গতকালই ছুটিয়ে কাটিয়ে কাজে ফেরেন। তার পরই এই ঘটনা। তাহলে কি অবসাদে ভুগছিলেন ওই কনস্টেবল? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি কমিশনার গোয়েল। তিনি জানিয়েছেন, অবসাদের বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। সত্যিই যদি অবসাদগ্রস্ত হয়ে থাকেন ওই পুলিশকর্মী, কী কারণে তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনার গোয়েল।
পুলিশ বা সেনার চাকরিতে অবসাদ থেকে আত্মহত্যার ঘটনা যদিও নতুন নয় এই শহরে। এর আগে, ২০২০ সালে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রেস কর্নারের সামনে আত্মঘাতী হন বিশ্বজিৎ কারক নামের এক পুলিশকর্মী। সার্ভিস রাইফেল থেকেই চোয়ালের নীচে নিজেকে গুলি করেন। সেই গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় তাঁর মুখ। কনস্টেবল পদে কর্মরত ওই পুলিশকর্মীও অবসাদে ভুগছিলেন, তার জন্য তাঁর চিকিৎসাও চলছিল বলে জানা যায়। ২০২১-এ বালিগঞ্জ সেনা শিবির থেকে জওয়ানের ঝুলন্ত দেহ ঘিরেও অবসাদের তত্ত্ব উঠে আসে। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, অত্যধিক কাজের চাপ, বদলি সংক্রান্ত সমস্যা,, এখনও পর্যন্ত পুলিশ এবং সেনাকর্মীদের আত্মহত্যার নেপথ্যে এমন কারণই বার বার উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: Shootout in Kolkata: ভরদুপুরে কলকাতায় এলোপাথাড়ি গুলি পুলিশকর্মীর, মৃত দুই
কিন্তু এ যাবৎ প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র নিজেকেই শেষ করে দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু পার্কসার্কাসের ঘটনায় একরকম আক্রোশ চোখে পড়েছে। নইলে রাস্তায় বেরিয়ে এসএলআর রাইফেল থেকে ও ভাবে মুহুর্মুহু গুলি চালানো যায় না বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। লেপচা অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কিনা, এখনও জানা যায়নি। তবে পুলিশকর্মীদের মধ্যে অবসাদের কোনও লক্ষণ চোখে পড়লেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানিয়েছেন কমিশনার গোয়েল। তিনি বলেন, "কারও মধ্যে অবসাদ থাকলে, আমরা সবসময় তাঁকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। জানতে পারলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উনি কালই ছুটি থেকে ফিরেছিলেন। শুধু গুলিই চালাননি, নিজেও আত্মঘাতী হয়েছেন। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন কনস্টেবল!
ঘটনাস্থল থেকে সামনে আসা সিসিটিভি ফুটেজে লেপচাকে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ হাই কমিশনের পাশের একটি বাড়িতে ঘটনার আগে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখা যায় তাঁকে। আবার নেমেও আসতে দেখা যায় সিঁড়ি দিয়েই। তার পরেই বাইরে বেরিয়ে তিনি এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ। অ্যাপ রাইডে চেপে যাওয়া ওই মহিলা তচখনই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পর গুলি চালাতে চালাতেই লেপচা লোয়ার রেঞ্জ মোড়ের দিকে ছুটে যান। তাতে আতঙ্কিত মানুষ ছুটে পালাতে থাকেন। তাঁর ছোড়া গুলিতে বেশ কয়েক জন আহত হন। এর পর মোড়েই চোয়ালের নীচে রাইফেল ঠেকিয়ে নিজেকে শেষ করে দেন লেপচা।