কলকাতা: দীর্ঘ সময় ধরে জেলবন্দি। তিন বছর তিন মাস পর অবশেষে জামিনে মুক্তি। (SSC Scam) কিন্তু দল কি আগের মতো গ্রহণ করবে তাঁকে? জনজীবনে কি আবারও আগের মতো ফিরতে পারবেন তিনি? বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে টাকার পাহাড় উদ্ধার নিয়েই বা কী প্রতিক্রিয়া? এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। (Partha Chatterjee)

Continues below advertisement

প্রশ্ন: তিন বছর সাড়ে তিন মাস পর নাকতলার বাড়িতে ফিরলেন। এর পর, এ জীবন লইয়া কী করবেন? 

পার্থ: জীবন তো আর শেষ হয়ে যায়নি! প্রথমে নিজেকে সুস্থ করা, কর্মযজ্ঞে ফিরে যাওয়া। আমি জীবনে একটা জিনিস বুঝেছি, ম্যানেজমেন্ট পড়তে এবং পড়াতে গিয়ে যা শিখেছি, এর কোনও শেষ নেই। মাছ জল ছাড়া থাকতে পারবে না। কচ্ছপ থাকতে পারে, মাছ পারবে না।

Continues below advertisement

প্রশ্ন: আপনিও রাজনীতি ছাড়া থাকতে পারবেন না?

পার্থ: আমার তো ২১-এর পর থেকে রাজনীতিই প্রধান লক্ষ্য! আমি তো পতাকা ধরে অর্থ অর্জন করতে আসিনি! আমি একটা আদর্শের উপরে, কী আদর্শ! সবাই জিজ্ঞেস করে তৃণমূলের কী আদর্শ? আমি বলি, তৃণমূলের মূল আদর্শ হল মানুষের সঙ্গে থাকা। মানুষের প্রতিনিধির নামই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দেখে এসেছিলাম। ২৫ বছর তো থাকলাম, আছি। বিধায়ক হয়েছি, বিরোধী দলনেতা হয়েছি।

প্রশ্ন: তার পরও কি আপনার মনে এটা সঞ্চারিত হচ্ছে যে তৃণমূল আপনার দল?

পার্থ: তৃণমূল আমার দল নয় কে বলল? আপনারা তো বার বার প্রশ্ন করেছেন যে দল আপনার সঙ্গে নেই। আমি বলেছি, দল আমার পাশে না থাকলেও, আমি দলের সঙ্গে আছি।

প্রশ্ন: এখনও?

পার্থ: এখনও।

প্রশ্ন: এর পর কী, আপনি কি বিধানসভায় যাবেন? এখনও তো বিধায়ক পদে আছেন! 

পার্থ: সেটা এখনও ভেবে দেখিনি। সাড়ে তিন বছর যখন যাইনি, সাড়ে তিন মাস গিয়ে কী হবে? বিধানসভা তো জনপ্রতিনিধিদের বলার জায়গা। সাড়ে তিন বছর ধরে বলতে পারিনি। আমায় বলতে দাও বলে চিৎকার করেছি। কিন্তু কেউ তো আমার কাছে আসেনি! শোনেনি! বলতেও পারিনি আমি। আমি আমার বিধানসভা কেন্দ্র, বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রত্যেক মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাঁরা কি একটা অসৎ লোককে ২৫ ধরে জিতিয়েছেন? আমি তো ৩০-এ বিরোধী দলনেতা! আমার তো গোল্ডেন পিরিয়ড হচ্ছে বিরোধী দলনেতা!

প্রশ্ন: দলের সঙ্কটকালে!

পার্থ: সঙ্কটকালে নয়! দলকে আনা, ক্ষমতায় আনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাইরে, আমি ভিতরে। সুব্রত বক্সির সঙ্গে থাকত তখন। ক'টা লোক? পিছনে সুব্রত বক্সি, সামনে আমি। এই বলো, এই ফোন আসছে, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে! কত কথা মনে আসছে। কত কথা একদিনে বলব বলো তো?

প্রশ্ন: কিন্তু পার্থদা, দলে আপনাকে ফিরে যেতে গেলে, দলকে তো সিদ্ধান্ত বদল করতে হবে? সাসপেনশন তুলতে হবে। আপনি কি আবেদন করবেন?

পার্থ: আমি জানি না। তোমরা বলছো সাসপেন্ড করেছে। আমার প্রধান কাজ হবে নিজেকে সুস্থ করে তোলা। মানসিক, শারীরিক যে শক্তিক্ষয় হয়েছে, তাকে পুনরুদ্ধার করা। আর বেহালার মানুষের কাছে যাওয়া। 

প্রশ্ন: সেটা কবে যাবেন?

পার্থ: এ মাসেই যাব।

প্রশ্ন: কী বলবেন গিয়ে?

পার্থ: বলব, আমি তোমাদেরই প্রতিনিধি। আমি তোমাদেরই লোক।

প্রশ্ন: একটা লিফলেট বিলি হচ্ছে। আপনার বার্তা...

পার্থ: আমি কাল একটা ড্রাফ্ট করেছি। এর মধ্যে বিক্রি হল কী করে জানি না। বেহালায় কখনও মেট্রো চলবে, কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত হবে, কেউ ভেবেছিল? বিদ্যাসাগর হাসপাতাল, 'গঙ্গাসাগর বার বার, বিদ্যাসাগর একবার' এই স্লোগান ছিল। আবার নাকি খারাপ হয়েছে বলে শুনছি। লাইট হয়েছে, থানা হয়েছে, পুলিশ থানা হয়েছে, কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে, জল নিকাশির ব্যবস্থা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে। এই সাড়ে তিন বছরে ক'টা হয়েছে বলতে পারব না। উন্নতি তো হয়েছে! তা সম্ভব হয়েছে, বেহালার কখনও সাতটা, আটটা, দশটা জনপ্রতিনিধি, পৌরপ্রতিনিধিরা সমন্বয় সাধন করেছেন। জনপ্রতিনিধি এবং দল কিন্তু সব নয়, এর বাইরেও লোক আছে। বুদ্ধিজীবীরা আছেন। বেহালায় সংস্কৃতিবান লোক আছেন।

প্রশ্ন: আপনি বলছেন, সাসপেনশনের চিঠি পাননি?

পার্থ: আমি শুনেছি!

প্রশ্ন: প্রেস মিট করে, সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল ভবন থেকেই তো বলা হয়েছে?

পার্থ: সেটা আমি জেল থেকে দেখব কী করে! জেল নয়, ইডি কাস্টডিতে ছিলাম। ইডি অফিসাররা এসে বলল, 'দল আপনাকে সাসপেন্ড করেছে। আপনার মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়েছে। এর পরও আপনি চুপ করে থাকবেন'? আমি বললাম, দলের কাজ দল করেছে। দল যা ভাল মনে করেছে, করেছে।

প্রশ্ন: মানে?

পার্থ: 'চুপ করে থাকবেন না, নাম বলুন, কী হয়েছে, কী হচ্ছিল'!

প্রশ্ন: আপনি কী বললেন?

পার্থ: আজও বলছি, আমি দলের বিরুদ্ধাচারণ করিনি।

প্রশ্ন: এই যে দল এত বড় বিড়ম্বনায় পড়েছে, মূল কারণ আপনি? এই যে দলের তরফ থেকে আপনার বিরুদ্ধাচারণ করা, এটাকে আপনি মানেন? মানে একাধিক...

পার্থ: আমি তো কোনওটাই শুনিনি। জেলের মধ্যে আছি। বাঁচব কী মরব, পা ফেলে হাঁটতে পারি না, বুকে যন্ত্রণা...শ্বাসকষ্ট হতো। অন্ধকারে বসে থাকতাম। এ এক জীবন। 

প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে?

পার্থ: আমার সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ নেই। 

প্রশ্ন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও হয়নি?

পার্থ: দলের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ হয়নি। বহু কর্মী আছেন দলের, তাঁরা যোগাযোগ রেখেছেন, কেউ মিষ্টি পাঠিয়েছেন, কেউ ফল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কোর্টে গিয়ে চোখের জল ফেলেছেন। তাঁদের তো আমি চিনি, জানি! অনেকেই এই কেন্দ্রীয় সংস্থার শাস্তি, যদি যাই, আবার আমায় ধরে! সেই ভয়ে অনেকেই আসেনি। 

প্রশ্ন: আপনার কাছে আসেনি?

পার্থ: আমার কাছে কেন! যাদের কাছে যাওয়ার কথা, তাদের তো নাগালই পাবে না। আমরা তবু তো নাগালে ছিলাম!

প্রশ্ন: অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও জেলে গিয়েছেন। তাঁদেরও শাস্তি হয়েছে, জেল থেকে বেরিয়েওছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু দল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি! সাসপেনশন হয়নি। আপনার ক্ষেত্রে করেছে। কেন মনে হয় আপনার?

পার্থ: আমি জানি না, হয়ত প্রথম কেস হিসেবে করেছে। জ্যোতিপ্রিয় অনেক পরে এসেছে, কেষ্ট অনেক পরে এসেছে। এই আইনি প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না। যা বলার আদালতে বলব, আইনজ্ঞদের মতানুসারে। আইন এবং রাজনীতি আলাদা। রাজনীতিতে সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, আইনি ভাবেই তার জবাব দেওয়া হবে।

প্রশ্ন: তৃণমূলের অনেক নেতা বলেন, আপনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কারণ হচ্ছে ভূরি ভূরি টাকা পাওয়া, যে টাকা এবং গয়না অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে!

পার্থ: ভূরি ভূরি টাকা, আমার থেকে, আমার বাড়ি থেকে তো পায়নি? বান্ধবী তার উত্তর দেবে। বান্ধবী তো আমার ওই, অর্পিতা আমার বান্ধবী। তাতে অসুবিধার কী আছে? আপনারা যদি শোভন-বৈশাখীকে দেখাতে পারেন, তা দেখাবেন? আর এখানে, দলে অনেককে খুঁজে পাবেন, সৌগতদাকে খুঁজে পাবেন, যারা যারা আছে, দিদিমণি তো খবর রাখেন না, তা নয়! সিরিয়াল দেখেন, সিনেমা আর্টিস্টদের খবর রাখেন, তাদের ক'টা বদল হল আর ক'টা থাকল, তিনি খবর রাখেন না? সব রাখেন। আমি না একেবারে বুদ্ধবাবুর মতো বুঝলেন! আমার যদি মেন্টর থাকেন কেউ, সংসদীয়তে তাহলে হাশিম আব্দুল হালিম। আর কাকে দেখে, কাকে আক্রমণ করে করতে হবে, তার নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর কে আমার নেতা? তাঁর নাম মমতা। এই নিয়ে এতদিন রাজনীতি করেছি।

প্রশ্ন: আপনি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে বান্ধবী বলে স্বীকার করছেন? সদর্পে বলছেন?

পার্থ: সদর্পে বলছি। তাতে হবে কী? আপনি আমার করবেন কী? যার বউ আছে, তার যদি দু'টো থাকতে পারে, আমার বউ নেই, একটা বান্ধবী থাকতে পারে না! বাহ্, এ কী? আমি সদর্পে বলছি।

প্রশ্ন: তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে ফিরে?

পার্থ: না। দেখুন আমাকে হাঁটুর বয়সি, অমুক বয়সি বলে যারা বিদ্রুপ করেছিল, তাদের প্রতি সহানুভূতি হয়। কারণ তাদের সবটাই আমি জানি। তাই বলে তাদের অপমান করতে চাই না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কাউকে আক্রমণ করিনি কখনও, কেউ বলতে পারবে না। আমি সব সময় তিরবিদ্ধ হয়েছি। অনেকটা ভীষ্মের মতো অবস্থা। পাল্টা তির মারিনি। তবে জেলে গিয়ে শিখেছি, যদি তির না মারতে পারো, তাহলে জেলই তোমার স্থান হবে। জেলে আমাকে যারা বুদ্ধি দেয়, মাওবাদী নেতা রয়েছে, নামকরা লোক আছে সব। তাদের বই পড়ে, রামকৃষ্ণ কথামৃত, গীতা...কাজ করার কিছু তো নেই! হনুমান চালিশা...পড়ে সময় কাটিয়েছি। বড় বড় মাওবাদীদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের দেখেছি। কষ্ট হয়নি কোনও। কষ্ট হয়েছে এই ভেবে যে, ব্রুটাস তুমিও।

প্রশ্ন: এই ব্রুটাসটা কে? 

পার্থ: সেটাই খুঁজে বের করব।

প্রশ্ন: এখনও খুঁজে বের করতে হবে, জানেন না?

পার্থ: সঠিক না জেনে তির মারতে নেই। অস্ত্র আছে একটাই, অর্জুন কি সেই মেরেছিল কর্ণকে, যত ক্ষণ না কৃষ্ণ বলেছিল মারো! আমার কৃষ্ণ ছিল। আবার ঝেড়েমুছে যদি সেই কৃষ্ণই...

প্রশ্ন: দল যদি আপনাকে ফিরিয়ে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?

পার্থ: লেট দেয়ার বি ব্রিজ, আই নো হাউ টু ক্রস ইট।

প্রশ্ন: রাজনীতিতে থাকবেন তখন? নির্দল হওয়া বা অন্য দলে যাওয়া, বা তৃণমূলেই থাকা! কী অপশন?

পার্থ: সেতু সামনে থাকলে, তা পেরোতে জানি আমি। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ গেলেন। কী পরিশ্রম করেছেন! কাল দেখলাম উনি স্বাস্থ্যভবন থেকে অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছেন, সাংসদ তহবিল থেকে টাকা জোগাড় করে মানবকল্যাণ থেকে দিয়েছেন। কালই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিধায়ক তহবিলের কিছু টাকা রেখে, বাকি টাকা মুখ্যমন্ত্রীকে ফেরত দিয়ে দেব। আমি তো কোনও কাজ করিনি! যে আবেদন পড়ে রয়েছে, যা বৈধ মনে হবে ছেড়ে দেব, বাকিগুলি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেব, যাতে ওই অ্যাম্বুল্যান্সে আমিও অন্তত কিছুটা দিতে পারব! উনি ১০০টা কিনেছেন, আমি হয়ত ৫-১০টা দিতে পারব। বেহালা পশ্চিমের বিদ্যাসাগর হাসপাতালের জন্য একটা দেবেন, এটা আমার আবেদন। 

প্রশ্ন: আপনি জেলে যাওয়ার পর, বা সংশোধনাগারে যাওয়ার পর কথা ওঠে, শিক্ষাদুর্নীতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোনা যায়, এটা দলকে সবচেয়ে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। আপনি কি মনে করেন?

পার্থ: আমি মনে করি না। দুর্নীতি কোনও ইস্যুই নয়। তাহলে জয়ললিতা ফিরতে পারত না, স্ট্য়ালিন ফিরতে পারত না, এমনকি বিজেপি-ও ফিরতে পারত না। দুর্নীতি একটা বিষয়, আর একটা বিষয় হল, রাজ্যের উন্নয়ন। উন্নয়নটাই হচ্ছে ম্যাক্সিমাম। ৮০ শতাংশ আমরা ব্যয় করি অকাজে, ২০ শতাংশ ব্যয় করি কাজে। এখানেও তাই। সবটাই  দুর্নীতিতে ব্যয় করলে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্প,১০০ দিনে দুর্নীতি বলে যদি সময় ব্যয় করি...এটা তো আজ থেকে নয়। চিরকাল চলে আসছে। শিক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে কি না, আমার সময় তো কেউ বলেনি! আমি তো সর্ববৃহৎ সময়, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম। '২১ আমি চলে এলাম, তার পরই এসব দুর্নীতি আরম্ভ হল! আমি তো জানি না। বামপন্থী বলুন বা বিজেপি, বলেছে বেনিয়ম হয়েছে। আপনিও তো গিয়েছেন! পুরনো রেকর্ডগুলো খুলুন না! বেনিয়ম হতে পারে, ভুলত্রুটি হতে পারে, তার জন্য গাঁধীমূর্তির পাদদেশ, প্রেস ক্লাব, বিকাশভবনে আন্দোলন হয়েছে। কেমন যেন অমোঘ মেঘ, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে যে উন্নতি করেছিলাম, ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৮০০০ স্কুল হয়েছিল, ছাত্রভর্তি, উপস্থিতির সংখ্যা বেড়েছিল। ১২ থেকে গিয়েছিল ২১-এ। এই যে বৃত্তি, বিবেকানন্দ স্কলারশিপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছেন, এই যে স্কুল ড্রেস, ৫০০ শিক্ষককে রিজার্ভেশন করে, বিনা পয়সায় প্রশিক্ষিত করে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন, এমএসকে, এসএসকে-র সমস্যা মিটিয়েছেন, সেগুলো সবাই ভুলে গেল?

প্রশ্ন: স্কুল সার্ভিস কমিশনই তো হাজার হাজার তালিকা প্রকাশ করে বলছে দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে?

পার্থ: আমার একটা প্রশ্ন আছে, এটা স্বয়ংশাসিত সংস্থা, শিক্ষামন্ত্রীর তো কোনও কাজ নেই? কোথাও একটা নিয়ে আসুন না! আবারও আইনের পথে যাচ্ছে। আমি এর উত্তর দেব না। ওরা স্বয়ংশাসিত সংস্থা, ওদের বোর্ড, চেয়ারম্যান কাজ চালায়, নিজেদের নীতি নিয়ম আছে। এখানে আইনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। আইনি বিচার্য বিষয়। আইনের প্রতি, বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমি, গণতন্ত্র, জনগণদেবতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

প্রশ্ন: এতদিন পর ফিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আপনার অবজার্ভেশন কী? আগে মহাসচিব, মন্ত্রী, মুখপত্রের সম্পাদক, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান ছিলেন আগে। সেই সময় একটা ধারণা ছিল, এখন কী ধারণা?

পার্থ: আমার কোনও ধারণাই নেই। আমি তো চিরকাল মমতার ছবি দেখেছি। বাদবাকি তো আমরা! কবে এটা ঠিকই, সেদিনও আমি জেলে বন্দি হওয়ার আগে, শেষবার আপনাকে সাক্ষাৎকার দিই যে, মমতা যতদিন আছেন, তিনিই আমার নেতা। কিন্তু অভিষেক, সেদিনও বলেছি, আজও বলছি, অটোমেটিক চয়েস। আজ যারা তার পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে শুনেছি জেলে থাকতে, শুনি সব। সেদিন কিন্তু ওর পাশে দাঁড়ায়নি তারা। আমিই দাঁড়িয়েছি, আমিই জেল খাটছি। অভিষেক অটোমেটিক চয়েস, এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।

প্রশ্ন: এই পরিণতির জন্য কে দায়ী? আপনি নিজেই?

পার্থ: আমি নিজেই। আমার আনুগত্য। 

প্রশ্ন: কেন বলছেন?

পার্থ: আমার আনুগত্যই আমার পতনের জন্য দায়ী, এই পরিণতির জন্য দায়ী।