কলকাতা: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি (SSC Case)। তৃণমূলের বিধায়ক থেকে একদা যুব তৃণমূলের নেতা।এমনকি শিক্ষা দফতরের একসময়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারাও। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন অনেকেই।
কিন্তু, এখনও বিরোধীরা বারবার যে প্রশ্নটা তুলে চলেছে, তা হল, চাকরি বিক্রির এই চক্রের মাথা কে? কতদিনে সেই মাথা অবধি পৌঁছবে ইডি-সিবিআই-এর হাত? সেই জল্পনা আরও জোরাল করে তুলল জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) একটি মন্তব্য়।


সোমবার আদালতে দাঁড়িয়ে পার্থ জানান,  SSC তার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী চলে। মন্ত্রীর সুপারিশ করারও কোনও ক্ষমতা নেই।নিয়োগকর্তাও তিনি নন। বিভিন্ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মুখ্য়সচিবকে রিপোর্ট করেন।  মুখ্য়সচিব আবার রিপোর্ট করেন মুখ্য়মন্ত্রীকে।


আরও পড়ুন: Recruitment Scam : গ্রেফতার অযোগ্য শিক্ষকরা, আর কি কেউ সাক্ষী হবেন ? উঠছে প্রশ্ন, পাল্টা মামলা শক্তপোক্ত হওয়ার দাবি


নিজের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় মুখ্য়মন্ত্রীর উল্লেখ করতেই, বিষয়টি কার্যত লুফে নিয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, আদালতে দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য় করে পার্থ কী ইঙ্গিত করতে চাইলেন? তাঁর এই বার্তা কি বিশেষ কারও দিকে ইঙ্গিত? মুখ্য়মন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে কি তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুললেন পার্থ?


তবে সেখানেই থামেনি গোটা বিষয়টি। আদালতকক্ষে ওই মন্তব্যের পর, বাইরে বেরিয়ে আবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন পার্থ। তাই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা যে,  আদালতের ভিতরে মুখ্য়মন্ত্রীর প্রসঙ্গ টানা, আর বাইরে মুখ্য়মন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য় বার্তা কি আসলে পার্থর কৌশলী অবস্থানের অঙ্গ?


কৌশলী বুদ্ধি খাটিয়েই পার্থ এই মন্তব্য করেছেন বলে মত রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শুধু তাই নয়, মমতার অগোচরে কিছুই ঘটেনি বলেও মত তাঁর। সুকান্তের বক্তব্য, "পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গর্দান এত শক্ত নয়, দশটি মাথা নেই যে মুখ্যমন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে তিনি এই কাজ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী জানতেন এবং শুধু তাই নয় আস্তে আস্তে সব প্রকাশ পাচ্ছে।"

এর আগে পার্থর অ্যারেস্ট মেমোয় ইডি দাবি করে যে, গ্রেফতার হওয়ার পর মোট চার বার মমতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন পার্থ। ED-র অ্যারেস্ট মেমোতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম বার রাত ২টো বেজে ১২ মিনিটে মমতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন পার্থ, তারপর  রাত ২টো বেজে ৩১ মিনিটে এবং রাত ৩টে  বেজে ৩৭ মিনিটেও যোগাযোগের চেষ্টা করেন।


কিন্তু কোনও বার ফোনে মমতাকে পাননি পার্থ। এরপর শনিবার সকাল ৯টা বেজে ৩৫ মিনিট নাগাদ শেষবার মমতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন পার্থ। কিন্তু সাড়া পাননি তিনি। সংবাদমাধ্যমে সে কথা স্বীকারও করে নেন তিনি। নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে, পার্থর জবাব ছিল, "চেষ্টা করেছিলাম, পাইনি।" তাই আদালতে পার্থ মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তোলায় জোর জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে।