প্রকাশ সিন্হা, সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের ৪ শিক্ষক গ্রেফতার হয়েছেন। আইনজীবীদের একাংশের মত, এর ফলে মামলা আরও শক্তপোক্ত হবে। তবে, অনেকে আবার প্রশ্ন তুলছেন, এই ৪ জনের গ্রেফতারির পর, আর কোনও অযোগ্য শিক্ষক কী আর নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) নিয়ে মামলায় সাক্ষী হবেন ? নিয়োগ দুর্নীতির মাঝে প্রথমবার আদালতের নির্দেশে অযোগ্য শিক্ষকদের গ্রেফতারিতে চলছে তর্ক।
টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া অপরাধ। তাহলে তো টাকা দিয়ে চাকরি কেনাও অপরাধ ? কারণ, ঘুষ নেওয়ার মতো, ঘুষ দেওয়াও তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে একের পর এক হেভিওয়েটের গ্রেফতারি। শিক্ষা দফতরের হুজ-হু দের জেল-যাত্রার মধ্যেই এই প্রশ্নটাও ঘোরাফেরা করছিল যে, কেন অযোগ্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ? কারণ, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) থেকে নিম্ন আদালতও বিভিন্ন সময় এই প্রশ্ন তুলেছে।
গত বছরের অক্টোবরে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, যাঁরা অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিজে থেকে পদত্যাগ করা উচিত।
তারা তা যদি না করে, তাঁরা যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন, তাহলে আদালত কড়া পদক্ষেপ নেবে। টাকা দিয়ে স্কুলে চাকরির প্রসঙ্গে, ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ED-র জানতে চান, কুন্তল ঘোষের বাড়ি থেকে পাওয়া ১৮৯টি OMR শিট এবং অ্যাডমিট কার্ডগুলো কাদের ? এরপরই, বিচারপতি বলেন, আগামী ২৫ বছর তাঁরা যেন কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে না পারেন তার ব্যবস্থা আমি করব।
এত সাহস হয় কী করে? এরা কারা? আমি এদের কিছুটা জমি দিয়ে আন্দামান পাঠিয়ে দেব। চাষ করে খাবে। ED চাইলে এই ১৮৯ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
শুধু কলকাতা হাইকোর্ট নয়। ৩০ মে, বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় CBI-এর কাছে জানতে চান যে, টাকার বিনিময়ে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের কেন অভিযুক্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ? কেন তাঁদের নাম চার্জশিটে রেখে দুর্নীতি দমন আইনে চার্জশিট দেওয়া গেল না ? এই অবস্থায়, এবার টাকা দিয়ে চাকরি কেনার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মুর্শিদাবাদের ৪ শিক্ষক।
অনেকে আবার প্রশ্ন তুলছেন, এই ৪ জনের গ্রেফতারির পর, আর কোনও অযোগ্য শিক্ষক কী আর সাক্ষী হবেন ? এই অবস্থায়, CBI-সূত্রে দাবি, টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন এরকম কয়েক হাজার অবৈধ শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র কয়েক জনকে গ্রেফতার করলে ভুল বার্তা যাবে। যেহেতু এরা তদন্ত সহযোগিতা করছেন, তাই এঁদের গ্রেফতার করলে বাকিদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তাই গ্রেফতার না করে, সাক্ষী হিসাবে চার্জশিটে ৪ জনের নাম রাখা হয়েছিল। যদিও যে যুক্তি খারিজ করে সমান দোষে দুষ্ট জানিয়ে অযোগ্য শিক্ষকদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিল আলিপুর আদালত।
আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদের পর এবার বাঁকুড়ার ৭ প্রাথমিক শিক্ষককে তলব !
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন