রুমা পাল, দীপক ঘোষ ও রঞ্জিৎ হালদার, কলকাতা : গ্রেফতার হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে চারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। অ্যারেস্ট মেমোতে এই তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে বলে ED সূত্রে দাবি। এনিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনীতি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি দূরত্ব তৈরি হয়েছে তৃণমূলের ?
আচমকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘিরে ইডি’র অভিযান। তারপর তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার। শেষে SSC নিয়োগ আর্থিক দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার। যদিও তৃণমূল প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। তাহলে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি দূরত্ব তৈরি হয়েছে তৃণমূলের ? SSC নিয়োগ আর্থিক দুর্নীতি মামলায় মন্ত্রীর গ্রেফতারির পর থেকেই জোরাল হচ্ছে সেই জল্পনা। যাঁর সূত্রপাত অবশ্য হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যকে ঘিরেই। শনিবার গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি দাবি করেছিলেন, চেষ্টা করেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। গতকাল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সাংবাদিকদের তরফে জানতে চাওয়া হয়, নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কোনও ? এর উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, চেষ্টা করেছিলাম। পাইনি।
আরও পড়ুন ; অর্পিতাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা দুর্ঘটনা, ইডি-র কনভয়ে ধাক্কা অন্য গাড়ির
কোটি কোটি টাকা উদ্ধার। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর, তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, গোটা ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এও প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইল ফোন সিজ করে নিয়েছে ED। তাহলে উনি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করলেন কীভাবে ? ফিরহাদ বলেছিলেন, কী করে যোগাযোগ করবে? প্রথমেই তো ফোন সিজ করে নেয়। তাহলে যোগাযোগ করবে ? কোনও যোগাযোগ করেনি।
যদিও ED সূত্রে দাবি, গ্রেফতার হওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কার সঙ্গে কথা বলতে চান ? উত্তরে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। চারবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর, রাত ১টা ৫৫ মিনিটে গ্রেফতার করা হয় শিল্পমন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিবকে।
ED সূত্রে খবর, তাদের অ্যারেস্ট মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রেফতারির পর রাত ২টো ১২ মিনিটে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রীকে ফোনের যোগাযোগের চেষ্টা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যয়। তারপর রাত ২টো ৩১ মিনিট, রাত ৩টে ৩৭ মিনিট ও শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তিনি।
যা মোটেই ভালভাবে নেয়নি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দল। সেই সঙ্গে ED-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। এনিয়ে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, অ্যারেস্ট মেমোতে মমতা ব্যানার্জীর নাম নিয়ে রহস্যের বিষয়। উনি যদি নাম দিয়ে থাকেন, অপ্রয়োজনীয় এবং অবাঞ্ছিত। যে নাম দিয়েছে তাঁর ব্যাপার। আরও যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁরা কিন্তু কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেয়নি। এজেন্সি বা এটা করল কেন ? মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কোনও সম্পর্ক নেই।
এবিষয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, অ্যারেস্ট মেমোতে মুখ্যমন্ত্রীর নাম থাকা নিয়ে টেকনিক্যাল বিষয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। আমরা কী করে বলব।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অ্যারেস্ট মেমোকে হাতিয়ার করে আবার, আরও গভীর তদন্তের দাবি তুলেছে সিপিএম। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কালীঘাট ঘিরে ফেলতে হবে। তবে কান টানলে মাথা আসবে।
সব মিলিয়ে ED-র অ্যারেস্ট মেমো ঘিরে বাগযুদ্ধ চরমে।