সোমনাথ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: আবাস যোজনার তালিকার আগে সমীক্ষা করাই নিয়ম। কিন্তু সেই সমীক্ষা করাই হয়নি। তার বদলেই তৈরি করে নেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকা। অভিযোগ, আসল উপভোক্তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তার বদলে তালিকায় নাম ঢুকেছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠের। এই অভিযোগ তুলে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে গ্রামসভায় পঞ্চায়েত সচিবের সামনে ক্ষোভ উগরে দিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। 


কী অভিযোগ:
আনন্দগড় গ্রামের বাসিন্দা পাঁচি সামন্ত বলেন, 'আমার লিস্টে নাম ছিল। এখন দেখছি নাম কাটা। ২২ বছর ধরে স্বামী নেই। ভাইয়ের ঘরে এইটুকুটুকু ছেলে মানুষ করছি। ভাই বের করে দিচ্ছে। কোথায় থাকব? ওই গ্রামের আর এক বাসিন্দা শম্ভু খাড়ুই বলেন, 'আনন্দগড় গ্রামে আবাস যোজনার কোনও সার্ভে হয়নি। কারোর বাড়িতেই যায়নি কেউ। কিন্তু আজ লিস্ট বেরিয়ে গিয়েছে।'


সম্প্রতি রাজ্যের নানা জেলায় বারবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে উঠে আসা অভিযোগের তালিকা প্রতিদিনই যেভাবে লম্বা হচ্ছে, তাতে এই প্রশ্নই তুলছেন সাধারণ গ্রামবাসীরা। 'বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা না করেই আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকৃত উপভোক্তাদের নাম বাদ দিয়ে ঢোকানো হয়েছে তৃণমূল কর্মী ও তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের নাম।' এমন অভিযোগ ঘিরে এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের রাজনগরের গ্রামসভা। তৃণমূল পরিচালিত রাজনগর গ্রামপঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েত সচিব ও প্রশাসনিক কর্মীদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। 


পুলিশের সামনেই চরমে ওঠে বাদানুবাদ। তা গড়ায় ধস্তাধস্তিতে। রাজনগর পশ্চিম গ্রামের বাসিন্দা আশিস দলুই বলেন, 'মেজর পোর্শনের অভিযোগ আবাস যোজনার সার্ভে বৈধ ভাবে হয়নি। ১৭-১৮ সালের লিস্ট গোপন করে শাসকদলের কর্মী লোকেদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ার ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা প্রকৃত সার্ভে করতে বাড়ি বাড়ি যায়নি। ঘরে বসে সার্ভে করে অবৈধ ভাবে লিস্ট জমা দিয়েছে।'


দাসপুর রাজনগর গ্রামপঞ্চায়েতের সচিব মহাদেব প্রধান বলেন, 'এটা আমরা মোটেই মেনে নিতে পারছি না। সেই পরিবারের কাছে না গেলে ফটো ক্যাপচারিং কী ভাবে হল? সেই ডকুমেন্টস দেখাচ্ছি। সে হয়তো সত্য উদঘাটন করতে দেয়নি। সে আমাদের কাঁচা বাড়ি দেখিয়েছে। পাশে পাকা বাড়ি আছে।'


পুলিশের পদক্ষেপ: 
দু'পক্ষের চরম টানাপড়েন গোলমাল থামাতে শেষ পর্যন্ত আশ্বাস দিতে হয় পুলিশকে। দাসপুর থানার ওসি অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, 'দরখাস্ত করুন। আপনার নাম নথিভুক্ত হয়ে যাবে। অতি অবশ্যই নথিভুক্ত হবে। কেউ বঞ্চিত হবেন না । কেউ বঞ্চিত হবেন না।'


গোটা ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল পরিচালিত রাজনগর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান অরুণ দলুই।


আরও পড়ুন: অনুব্রতকে কি দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে ইডি ? কোথায় দাঁড়িয়ে গরু পাচার মামলা?