অলোক সাঁতরা, শালবনি: এ যেন উদাসীনতার মলিন ধুলো ঝেড়ে ইতিহাসের অঙ্গরাগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে নতুন সাজে সেজে উঠেছে কর্ণগড়। যাঁরা বেড়াতে ভালবাসেন, যাঁরা দেখতে চান বাংলার মুখ, তাঁরা সপ্তাহান্তে চলে আসতেই পারেন জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ইতিহাস বিজড়িত এই নির্জন ভূমিতে।


জায়গাটির নাম কর্ণজোড়া, যদিও মহাভারতের বীর কর্ণের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। কর্ণজোড়ার সঙ্গে জড়িয়ে চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী রানি শিরোমণির বীরত্বের ইতিহাস, যাঁকে মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাই-ও বলা হয়ে থাকে। মেদিনীপুর শহর থেকে গড়বেতার রাস্তা ধরে ভাদুতলা হয়ে পৌঁছনো যায় কর্ণজোড়ায়। ইংরেজ আমলে যা ছিল বিদ্রোহের পীঠস্থান। সেখানে রানি শিরোমণির প্রায় ধ্বংস হতে বসা প্রাসাদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন পরিকাঠামো।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজ্যশাসন, প্রজাপালন এবং ব্রিটিশ দমনে রানি শিরোমণির খ্যাতি ছিল। ১৭৯৮ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কৃষক প্রজাদের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়। সেই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন রানি শিরোমণি। 


ভাঙা রাজবাড়ি, পুরনো সেনানিবাস, বিশাল দিঘি, এই সব নিদর্শন আঁকড়ে দু’বছরে প্রায় দু-কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক মানের ৯টি কটেজ, রিসর্ট ও ক্যাফেটেরিয়া। এই জায়গার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে রানি শিরোণির গড়। এই পার্কের দেখভাল ও পরিচর্যাতে থাকছে পাশপাশি গ্রামের ২২ জন প্রশিক্ষিত যুবক যুবতী ৷ 


গতকাল প্রশাসনিক উদ্যোগে তাঁর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রেশমি কমল। মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘এই যে সম্পদ তৈরি হচ্ছে, এখানকার অর্থনীতি বদলে যাবে। অনেক দোকান হবে, অনেক বাজার হবে। অনেকে ঘুরতে আসবেন। অনেকে থাকবেন। তাঁদের আপনারা মর্যাদা দেবেন। তাহলে দেখবেন কর্ণগড় আবার জ্বলে উঠবে এক উদ্ভাসিত আলোকের মতো।’


জেলাশাসক বলেন, ‘বিভিন্ন দফতরের সহযোগিতায় পর্যটন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। পুকুর সংস্কার করে সৌন্দর্যায়নের চেষ্টা চলছে। এখানে ৯টি কটেজ আছে। সামনে বড়দিনের ছুটি আছে। আমরা চাইছি বেশ কিছু লোক এখানে আসুক।’