সৌমেন চক্রবর্তী, সবং : ন্যায্য ক্ষতিপূরণ (Proper Compensation) ও চাকরির দাবিতে নিখোঁজ ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন এক মহিলা। তাঁর দাবি, মাওবাদীরা স্বামীকে অপহরণ করার পর ১২ বছর পেরিয়ে যাওয়ায়, সরকারি নিয়মে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আর্থিক সাহায্য পরিবার নিয়েছে, বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁকে।
স্ত্রী হিসাবে সরকারি আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কথা থাকলেও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্য। এই অভিযোগে নিখোঁজ ব্যক্তির স্ত্রী বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন এক মহিলা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) সবংয়ের (Sabang) মোগলানিচকের বাসিন্দা আনোয়ারা বিবির দাবি, ২০১০ সালের ১৬ মে, পেশায় ফেরিওয়ালা স্বামী শেখ মুন্না আলিকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। ১২ বছর কোনও খোঁজ না মেলায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শেখ মুন্না আলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মহিলার দাবি, স্ত্রী হিসাবে তাঁর আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছেন শেখ মুন্নার খুড়তুতো ভাই রাজেশ আলি। অভিযোগকারিণী আনোয়ারা বিবি বলেন, আমার স্বামী ফেরি করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। নিখোঁজের আগে ফোনে বলেন, মাওবাদীরা আমায় তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও আমি সেসব পাইনি, স্বামীর খুড়তুতো ভাই পেয়েছেন।
যদিও শেখ মুন্নার বাবার দাবি, আনোয়ারা বিবির সঙ্গে ২০১০ সালের ১৯ মার্চ, বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে ছেলের। নিখোঁজ ব্যক্তির বাবা শেখ তৈয়ব আলি-র বক্তব্য, ও আমার বৌমা নয়। ওর সঙ্গে আমার ছেলের আগেই ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমিই ক্ষতিপূরণের আবেদন করি। আমার দেখাশুনো করে আমার ভাইপো। তাই তাকেই চাকরি দিতে বলি।
ডিভোর্সের যে নথি দেখানো হচ্ছে, তা জাল দাবি করে পাল্টা পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ করেছেন আনোয়ারা বিবি। তাঁর দাবি, জাল কাগজ দেখিয়ে বলা হচ্ছে, আমার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে, যা সত্যি নয়।
অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। তিনি জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনার তদন্ত করে দেখবেন।
এদিকে ক্ষতিপূরণ বিতর্কেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অমূল্য মাইতি বলেন, এই ক্ষতিপূরণ আনোয়ারা বিবিরই পাওয়ার কথা। তৃণমূলের যোগসাজশে সেই চাকরি পেয়েছেন নিখোঁজের কাকার ছেলে।
যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বলেন, বিজেপির কাজ বিরোধিতা করা। পরিবারের একজন চাকরি পেয়েছে এটাই তো বড় কথা। স্ত্রীকে নাকি ডিভোর্স দেওয়া হয়েছিল। সরকার বিষয়টি দেখছে।
এখন দেখার, এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়।