সৌমেন চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস, খামতি ছিল না কিছুতেই। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি দেড় দশকেও। আজ এতদিন পর ফের একবার খবরে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি (Salboni News)। সেখানে ইস্পাত কারখানা গড়ার ঘোষণা হল সুদূর স্পেন থেকে। কোনও নেতা-মন্ত্রী নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি এবং স্পেনের শিল্পমহলের সামনে দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করলেন বাংলার 'দাদা' সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)।


২০০৮ সাল থেকে প্রতিশ্রুতি এবং প্রত্যাশাতেই কেটে গিয়েছে শালবনির মানুষের। দিনের শেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলেই আগল দিতে হয়েছে ঘরের।শুক্রবার সেই শালবনিতে সৌরভের ইস্পাত কারখানা তৈরির ঘোষণায় হাজারো সংশয়ের মাঝেও কিছুটা আশার আলো দেখছেন সেখানকার মানুষ। জমিদাতা পরিবারগুলির এক সদস্য বিমল চালক বলেন, "জিন্দল যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সে তো মুছেই গিয়েছে। জমিদাতাদের দায়িত্ব যেন নেন। দাদা যেন দায়িত্ব নেন। আমরা যেন চাকরিটা পাই। আশা দেখছি।"


শিল্পের জন্য ২০০৭ সাল থেকে শালবনিতে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। জিন্দলদের কারখানা তৈরির জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল ধাপে ধাপে। কিন্তু ইস্পাত কারখানার যে মূল প্রকল্প ছিল, আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৪ সালে জিন্দলরা জানিয়ে দেয় যে, শালবনিতে কারখানা করবে না তারা। কিন্তু এলাকাবাসীদের দাবি ছিল, জমি যেন আর ফেরত না দেওয়া হয়। শিল্পই যেন হয় সেখানে। এতদিন পর ফের বুকে বল পাচ্ছেন তাঁরা।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘ভারত থেকে এসেছি’, জগিংয়ের ফাঁকে মাদ্রিদে স্থানীয়দের সঙ্গেও আলাপচারিতা মমতার

কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে শালবনিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি। এর মধ্যে ১৩৪ একর জায়গায় তৈরি হয়েছে সিমেন্ট কারখানা। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান শিলান্যাস করেন জিন্দলদের কারখানার।

২০১৪ সালে কারখানা না গড়ে, জমি ফেরত দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেন জিন্দলরা। কিন্তু জমি ফেরত নয়, শিল্প চেয়েছিলেন জমিদাতা এবং এলাকার মানুষজন। ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানার শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।  ২০১৮ সালে সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করেন তিনি।

এর পর, শুক্রবার সৌরভের ঘোষণার পর ফের আশায় বুক বাঁধছে শালবনি। জমিদাতা পরিবারগুলির আর এক সদস্য চিরঞ্জিৎ চালক বলেন, "হাতেকলমে কাজ শিখিয়ে বলা হয়েছিল চাকরি দেবে। কিন্তু ট্রেনিংয়ের পরও কাজ পাইনি। শিল্প হলে তো সুবিধাই হবে, যদি সেখানে কাজ পাই। আমাদের তো দেখেও না দেখার ভান করে। হলে অবশ্যই খুশির খবর।"


শালবনি জেএসডব্লিউই বেঙ্গল স্টিল লিমিডেট জমিহারা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি পরিষ্কার মাহাতোর গলায় যদিও সংশয়ের সুর। তিনি বলেন, "জিন্দল জমি নিয়েছিলেন। কিন্তু শর্তপূরণ করেননি। সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।" জিন্দলরা যখন শালবনিতে এসেছিলেন, জমিদাতাদের দাবি ছিল নায্যমূল্য, চাকরি এবং শেয়ারের অংশ। নায্যমূল্য পেলেও বাকি দুই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। ফের সেই আশায় বুক বাঁধছেন জমিদাতারা।