কলকাতা: রাজ্য জুড়ে সক্রিয় পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্র। সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। জানালেন, পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইয়ে পুলিশের সরাসরি কোনও ভূমিকা নেই। আবেদন প্রক্রিয়ার সরলীকরণের জন্য কেন্দ্রের কিছু নিয়ম রয়েছে। পাসপোর্ট দফতর এবং পোস্ট অফিসই গোটাটা দেখে বলে জানালেন তিনি। জালিয়াতি রুখতে তাঁরাই যাচাই প্রক্রিয়া নিজেদের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন ডিজি। (Passport Verification)
রাজ্য জুড়ে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের রমরমা যখন প্রকাশ্যে, সেই আবহে রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন ডিজি। ২০১৮ সালে বিদেশমন্ত্রক পাসপোর্টের তথ্য যাচাই নিয়ে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল, এদিন তা তুলে ধরেন ডিজি। তিনি জানান, কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী,পাসপোর্ট আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। ঠিকানা যাচাই, আবেদনকারীর সঙ্গে দেখা করে স্বাক্ষরগ্রহণ করতে হবে না পুলিশকে। পাসপোর্ট দফতরের তরফে বিশেষ ভাবে অনুরোধ না করা হলে, পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। (DG Rajeev Kumar)
এদিন রাজীব জানান, পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া সহজতর করতেই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। পুলিশকে তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটাচ্ছি। এখন থেকে জেলার ক্ষেত্রে পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত ভাবে তথ্য যাচাইয়ের বিষয়টি দেখবেন। কলকাতার ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার থাকবেন দায়িত্ব। রাজীবের বক্তব্য, "খামতির কথা আগেই জানানো হয়েছিল। পার্কস্ট্রিটের ঠিকানা দিয়ে অন্য থানা লেখা যায় পাসপোর্টে।" তাই এখন থেকে পাসপোর্ট দফতর থেকে পোস্ট অফিস, সবটাই পুলিশ খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন ডিজি। কাউকে দোষারোপ করতে চান না, কিন্তু তাঁরা বরাবরই সহযোগিতা করে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অনুপ্রবেশকারীরা বেআইনি ভাবে যে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেত, তার জন্য যদিও রাজ্য সরকারকেই কাঠগডায় তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, "বাংলাদেশি মুসলিমরা সমস্ত জাল করছে। এর এপিসেন্টার হচ্ছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত পৌরসভা। তারা বসবাসের সার্টিফিকেট দিচ্ছে বলেই পাসপোর্ট তৈরি হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে যাচাইপত্র দিচ্ছে পুলিশ। এর জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মানুষকে বলব. ২০২৬ সালে একজোট হয়ে একবার এই সরকারকে বিসর্জন দিন। ব্লিচিং, ফিনাইল, কার্বলিক অ্যাসিড আরও কিছু লাগলে সবকিছু স্প্রে করে আমরা যেমন পার্থেনিয়াম নির্মূল করেছি, এদের কী করে সাফ করতে হয়, একদম পরিষ্কার করে দেব আমরা। যোগী আদিত্যনাথের মতো সুশাসন ও সুরক্ষা, গুজরাতের মতো শিল্প ও কর্মসংস্থান আমরা দেব।"
একদিকে সীমান্তে কাঁটাতারহীন বেড়া, অন্য দিকে, পাসপোর্ট জালিয়াতি। কেন্দ্র না রাজ্য, কার দায়িত্ব সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছেই। এ নিয়ে প্রাক্তন বিএসএফ কর্তা সমীর মিত্র বলেন, "৪৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২২১৮ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের। এর মধ্যে ৪৩৫ কিলোমিটারে এখনও কাঁটাতারের বেড়া হয়নি। কাজ চলছে। সেই নিরিখে অসমে বাংলাদেশ সীমান্ত ২৬২ কিলোমিটার, ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার, মিজোরামের ৩১৮ কিলোমিটার, মেঘালয়ের ৪৪৩ কিলোমিটার। ডিজি ওঁর কথা বলেছেন। তবে আমার মনে হয়, পরস্পরকে দোষারোপ না করে, একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। পর্যালোচনা করে দেখতে হবে পরিস্থিতি। কোনও জায়গায় যেন খামতি না থাকে।" বিনা কাঁটাতারে যে সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলে মত সমীর।