কলকাতা: পুজোর ঠিক মুখে, পরপর তিনদিন পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়াল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি।  আজ, বৃহস্পতিবার, কলকাতায় লিটারপ্রতি পেট্রোলের দাম বাড়ানো হল ২৯ পয়সা। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৫ পয়সা বেড়েছে। 


দাম বাড়ানোর জেরে  আজ কলকাতায় পেট্রোলের দাম লিটারে ১০৩ টাকা ৯৪ পয়সা হল।  ডিজেলের নতুন দাম হল লিটারে ৯৪ টাকা ৮৮ পয়সা।


গত ৫ তারিখ থেকে লাগাতার বেড়ে চলেছে জ্বালানির মূল্য। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর-- পরপর চারদিন বেড়েছিল জ্বালানির দাম। মাঝে ৪ তারিখ শুধু বাড়েনি পেট্রোল-ডিজেলের দাম। 


করোনা পরিস্থিতিতে যখন নাগরিকদের পকেটে টান পড়েছে, সেই সময় ফের জ্বালানির দাম বাড়ায় মাথায় হাত মধ্যবিত্তের।  লাগাতার এইভাবে জ্বালানির দাম বেড়ে চলায় মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহণ খরচ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ার সম্ভাবনা। ফলে পুজোর মুখে বাড়তে পারে সবরকম জিনিসপত্রের দামও। এসব নিয়ে মাথায় হাত মধ্যবিত্তের।  


শুধু যে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ছে তাই নয়। সমানতালে বেড়ে চলেছে রান্নার গ্যাসের দামও। পুজোর মুখে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে আরও বোঝা চাপিয়ে ফের বাড়ানো হয় রান্নার গ্যাসের দাম। 


গতকালই সংসার খরচ নিয়ে ধেয়ে আসে আরও এক দুঃসংবাদ। মধ্যবিত্তের হার্টবিটের গতি বাড়িয়ে এবার হাজারের পথে রান্নার গ্যাস। ১ সেপ্টেম্বরের পর বুধবার ৬ অক্টোবর ফের বাড়ানো হয় দাম। বুধবার কলকাতায় ১৫ টাকা বেড়ে ১৪.২ কেজির রান্নার সিলিন্ডারের দাম হল ৯২৬ টাকা। 


এই নিয়ে ১ মাসে ৪০ টাকা বাড়ল রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম।  তার আগে ৩ মাসে বেড়েছে ৭৬ টাকা। ৬ মাসে বেড়েছে ১১৬ টাকা।  আর গত ১ বছরে দেশে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে বেড়েছে ২৯১ টাকা। 


সব মিলিয়ে করোনার ধাক্কায় জেরবার সাধারণ মানুষের বোঝা কমানোর পরিবর্তে, প্রতিদিন তা বাড়ানোর খেলা অব্যাহত। গত কয়েক বছরে যেভাবে নজিরবিহীনভাবে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠছে। 


শুধু তাই নয়। সম্প্রতি বাণিজ্যিক রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়। ১৯ কেজি বাণিজ্যিক রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এক ধাক্কায় বাড়ে ৩৫ টাকা।যার ফলে, কলকাতায় বাণিজ্যিক রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম হয়েছে ১৮০৫ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে পুজোর সময় বাড়তে পারে রেস্তোরাঁয় খাবার খরচ। সাধারণ মানুষের মতো সমস্যায় ব্যবসায়ীরাও। 


অন্যদিকে, প্রাকৃতিক গ্যাসের ৬২ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার জেরে সিএনজি-র দামও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।  একইভাবে বিদ্যুত্‍ উত্‍পাদন, সার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস। ফলে সারের দামও বাড়তে পারে। 


করোনা আবহে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। হাতে টাকা নেই। তার ওপর অগ্নিমূল্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এসবের মধ্যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্তর। এই পরিস্থিতিতে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বাড়ছে জ্বালানির দাম। 


দাম বৃদ্ধি নিয়ে পাল্লা দিয়ে চলছে রাজনীতি। জ্বালানির দাম নিয়ে তরজায় জড়িয়েছ সব রাজনৈতিক দলই। গাল ভরা নানা কথা শোনাচ্ছেন নেতা-নেত্রীরা। সব পক্ষেরই দাবি, তাঁরাই সাধারণ মানুষের কথা সবচেয়ে বেশি ভাবেন।


কিন্তু, সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে লাগাতার চাপ বাড়ানো হচ্ছে, তার সুরাহা কিন্তু কোনও সরকারের গলাতেই শোনা যাচ্ছে না।


কিন্তু স্বস্তিটা মিলবে কবে? জানতে চাইছে সাধারণ মানুষ।