কলকাতা: প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বহাল রেখেছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। খারিজ করে দেওয়া হয়েছে তদানীন্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আগের চাকরি বাতিলের রায়। সেই নিয়েই এবার অধুনা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎকে নিশানা করলেন তৃণমূলের সাংসদ তথা অভিজ্ঞ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতিরা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হলে দেশের বিচারব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের ক্ষতি বলে মন্তব্য করলেন তিনি। (Primary Teachers Case)
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিতার চাকরি বহাল রাখেন। সেই রায় সামনে আসতে শিক্ষকরাই নন শুধু, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে রাজ্য সরকারও। আর সেই আবহেই অভিজিৎকে নিশানা করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, "সিঙ্গল বেঞ্চ বলেছিল ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি কেউ। ন'বছর ধরে চাকরি করছেন এঁরা। তাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হল কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে। ভাল রায় দিয়েছে আদালত। আমরা ডিভিশন বেঞ্চের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কৃতজ্ঞ বিচারপতিদের কাছে।" (Primary Teachers Recruitment Case)
এর পরই আক্রমণ শানাতে শুরু করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, "বাংলায় চাকরি খাওয়ার একটা ট্রেন্ড চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘেঁটে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এখানে। সেই আবহে কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় শ্বাস জোগাল। কোনও বিচারপতির যদি কোনও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা থাকে, যেমন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ছিল...সেই রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিচার করলে বিচারব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেটা দেখাই যাচ্ছে, ফল্টি হয়েছে। আর একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে, সিপিএম-এর একটি আইনজীবীদের গোষ্ঠী ইনডালজেন্স পাচ্ছে। তারা তখন যা বলেছিল, এখন যা বলছে, তাদের কথাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্য কারও কথা বিশেষ শোনা হচ্ছে না। এটা ভাল লক্ষণ নয়।" (Abhijit Gangopadhyay)
অভিজিতের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে কল্যাণ আরও বলেন, "বিচারব্যবস্থায় যাঁরা বিচার করেন, তাঁরা সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে, নিজস্ব ভাবনা, নিজস্ব পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করেন, যা আজ ডিভিশন বেঞ্চ করেছে। ৩২ হাজার চাকরি খাওয়ার পর একদিন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে 'ভগবান' বলে স্লোগান তুলেছিল একদল। আজ অন্যরা স্লোগান তুলছে 'শয়তান' বলে। বিচারব্যবস্থাকে যিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত করে তুলেছেন, তিনি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কীভাবে রাজনীতিতে এসেছেন উনি, সকলে দেখেছেন। সিপিএম এবং বিজেপি-র নেক্সাসে যেভাবে বাংলায় শিক্ষকদের চাকরি খাওয়া হচ্ছে, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, তা ভাল লক্ষণ নয়। বিচারবিভাগ এবং রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা। বিচারপতিরা যেন রাজনীতি না করেন। তাহলে খুব মুশকিল। বিচারপতিরা রাজনীতিকদের মতো প্রচার চাইলে মুশকিল হয়। বিচারপতিদের কাজ প্রচার পাওয়া নয়, বিচার করা। অত্যন্ত কঠিন কাজ।" (Kalyan Banerjee)
কিন্তু এই যে দুর্নীতির অভিযোগ, গ্রেফতারি, সিবিআই, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সবই কি ভুল? কল্যাণের বক্তব্য, "এই রায়ের সঙ্গে যোগ নেই। গ্রেফতার হলে হবে, বিচারও চলবে। কিন্তু এই ৩২ হাজার চাকরিতে কোনও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। শুধু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন দুর্নীতি। সেটা তো প্রমাণ করতে হবে? নিজের ভাবনা থেকে বললে তো হবে না! রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে উনি এটা করেছিলেন। সেটা ভুল।"
ডিভিশনে বেঞ্চ ৩২ হাজার চাকরি বহাল রাখার পর এদিন এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন অভিজিৎও। তিনি বলেন, "ডিভিশন বেঞ্চের বিচার করার ক্ষমতা আছে, তাই ডিভিশন বেঞ্চ আছে। যা ভাল মনে করেছে করেছে! আমার তো কিছু বলার নেই! আমি বিচারপতি হিসেবে যা মনে করেছিলাম বলেছি। পার্থক্য তো আছেই! কী গ্রাউন্ডে হয়েছে, সেটা জানতে পারলে বলব। উনি বলতেই পারেন। আমার কিছু বলার নেই।"