কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: প্রয়াত সিপিএম-এর প্রবীণ নেত্রী মহারানি কোঙার। বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিন দফায় সিপিএম-এর বিধায়ক নির্বাচিত হন মহারানি কোঙার। তাঁর স্বামী বিনয় কোঙারও সিপিএম-এর নেতা ছিলেন। আজীবন বামপন্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্বামী-স্ত্রী দু'জনই। মহারানি কোঙারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া এলাকায়। (Maharani Konar)
১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিন বার পূর্ব বর্ধমানের মেমারি বিধানসভার বিধায়ক নির্বাচিত হন মহারানি কোঙার। শুক্রবার মেমারির বিডিও পাড়ায় নিজের বাড়িতেই, দুপুর ১টা বেজে ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ১৯৩৩ সালের ২৩ নভেম্বর হুগলির আরামবাগের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম তাঁর। ১৯৫৮ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য়পদ অর্জন করেন। দলভাগ হয়ে যাওয়ার পর সিপিএম-এ যোগদান, তার পর থেকে আজীবন সিপিএম-এর সদস্য ছিলেনই, ছিলেন দলের সক্রিয় কর্মীও। (Purba Bardhaman News)
মহারানি কোঙারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার বাড়িতে মহারানি কোঙারের দেহ শায়িত ছিল। দলের কর্মী থেকে অনুরাগীরা এসে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে যান। শনিবার সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে মিছিল তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মেমারি কালীতলায় দলের কার্যালয়ে। সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর পূর্ব বর্ধমান জেলা পার্টি অফিসেও তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতির জন্য় দেহদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মহারানি কোঙার। সেই মতো বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর দেহদান করা হবে।
এলাকাবাসীর কাছে মহারানি কোঙার বরাবরই শ্রদ্ধেয়। এলাকায় সিপিএম-এর সংগঠনকে মজবুত করে তোলা থেকে মহিলাদের রাজীনতিতে আনার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। এমনকি বার্ধক্যে পৌঁছেও ব্রিগেডে সভা থাকলে হাজির হতেন তিনি। ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে সমাবেশ রয়েছে বাম যুব সংগঠনের। সেই সমাবেশে আর যোগদান করা হল না মহারানি কোঙারের। তার আগেই চলে গেলেন তিনি।
মহারানি কোঙারের স্বামী বিনয় আগেই মারা গিয়েছেন, ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। সিপিএম-এর দাপুটে নেতা হওয়ার পাশাপাশি তিনি কৃষক নেতাও ছিলেন। আলিমুদ্দিনের একফালি ঘরেই জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে তাঁর। কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলাকালীন কিছু মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান বিনয় কোঙার। মেধা পটেকরের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। নন্দীগ্রাম নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। তার জেরে দলে একসময় কোণঠাসাও হয়ে পড়েন। তবে রাজনীতিতে স্বামীর থেকে একেবারে উল্টো মেরুতে অবস্থান ছিল মহারানি কোঙারের। বিতর্ক এড়িয়ে চলতেন বরাবরই।