রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান : রাজতন্ত্র ? সে-তো কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন রাজাও নেই, নেই রাজপাটও। কিন্তু হঠাৎ করে এক দশক বাদে বাদে কেতুগ্রামের বহরান গ্রামে ফিরে আসে 'রাজতন্ত্র'। আজই সেই দিন। এদিন রাজা কী আদেশ দেন, সেই অপেক্ষায় চেয়ে থাকেন প্রজারা। আসলে বহরানের এই রাজা-প্রজা খেলাটা বেশ অন্যরকম। যিনি রাজা তিনি ওই একদিনেরই রাজা। তারপর তিনি আর পাঁচজনের মতোই। বহরানও এ নিয়ম মেনে চলে ১০ বছর অন্তর।
দশ বছর পর এক দিনের জন্য রাজতন্ত্র, একদিনের জন্য রাজ-মুকুট ওঠে রাজার মাথায়। এক দিনই রাজার হুকুম মেনে চলতে হয় গ্রামবাসীদের। মানতে হয় রাজার আদেশ। অন্যথায় রাজা দেন শাস্তি। কারাগারে বন্দিও নয়, রাজার নির্দেশে প্রজাদের দিতে হয় আর্থিক জরিমানা। এই একদিনই রাজা তাঁর সভা পরিষদ, সৈন্য নিয়ে রাজ্য ভ্রমণে অর্থাৎ গ্রামে বার হন। তখন প্রজাদের অপরাধ দেখলেই জরিমানার নির্দেশ দেন তিনি। দশ বছর অন্তর এমন একদিনের সাক্ষী থাকে কেতুগ্রামবাসী। কেতুগ্রামের বহরান গ্রামে এ প্রথা বহুদিনের।
লোকমুখে শোনা যায়, প্রায় একশো বছরের পুরানো এই রীতি। দশ বছর অন্তর গ্রামের জয়দুর্গা পুজোর সময় একদিনের জন্য কেতুগ্রামের বহরান গ্রামে ফিরে আসে রাজতন্ত্র। দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের এক ব্যক্তিকে রাজা সাজিয়ে নকল সৈন্য নিয়ে ঘোড়ার রথে রাজাকে গ্রাম ঘোরানো হয়। গ্রামের দরিদ্র ব্রাহ্মণ, বয়স ৮৫-র আশেপাশে। অম্বিকা প্রসাদ চট্টরাজ নাম তাঁর। তাঁকে করা হয় রাজা। তিনি বললেন, ১৫ বছর বয়স থেকে ১০ বছর অন্তর একদিনের জন্য নকল রাজা হয়ে আসছেন তিনি। এখন তাঁর বয়স আশি পেরিয়ে গিয়েছে।
একদিন রাজা হতে পেরে তিনি খুবই খুশি।প্রজারাও তাঁকে রাজা হিসাবে সম্মান দেয়। এই দিন রাজা যখন তাঁর সৈন্য সামন্ত নিয়ে গ্রামের ভ্রমণে বার হন, তখন কোনও প্রজার বেয়াদপি রেয়াত করেন না। কেউ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করলেও তাঁকে দিতে হয় জরিমানা। রাজার সামনে ধূমপান করলে তার তো রেহাই নেই ! মোটা টাকার জরিমানা দিতে হয় তাঁকে। তবে রাজার এই দাপট শুধু একদিনের জন্যই। দিন পেরোলেই ফের রাজা হয়ে যান আর পাঁচজন গ্রামবাসীর মত। আবার রাজা হতে অপেক্ষা করতে হবে দশ বছরের জন্য।
আরও পড়ুন :