কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: পুজোর আগেই বিদেশে পাড়ি বর্ধমানের মিহিদানা ও সীতাভোগের। মিহিদানার পর এবার সীতাভোগ পাড়ি দিল মধ্যপ্রাচ্যে।কয়েকদিন আগেই বর্ধমানের শতাব্দী প্রাচীন রাজ ঐতিহ্যবাহী মিহিদানা পাড়ি দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের বাহরিনে।আর তার ঠিক কয়েকদিন পরেই এবার বর্ধমান সীতাভোগ এণ্ড মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েটসের উদ্যোগে ভিনদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল সীতাভোগ।
সীতাভোগ এণ্ড মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েটসের সম্পাদক প্রমোদ কুমার সিং বলেন,সপ্তাহ খানেক আগে বাহারিনে গেছে মিহিদানা। সেখানে মিহিদানা খেয়ে মানুষজন খুবই উচ্ছ্বসিত। তাই এবার নতুন করে মিহিদানার যেমন অর্ডার মিলেছে,তেমনি নতুন করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে সীতাভোগও।
একেবারে গাওয়া ঘি দিয়ে তৈরী জিআই ট্যাগযুক্ত সীতাভোগ পাড়ি দেবে বাহরিনে। কেন্দ্রীয় সংস্থা এপেডার মাধ্যমে বিদেশে পাঠাচ্ছে বর্ধমান মিহিদানা ও সীতাভোগ ট্রেডাস ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন।
২০১৭ সালে বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা জি আই স্বীকৃতি পায়। গত মাসেই ভারতীয় ডাক বিভাগ স্পেশাল কভার বানিয়েছে এই দুটি মিষ্টিকে স্বীকৃতি দিয়ে। ভারতীয় ডাক বিভাগের উদ্যোগে বাজারে ছাড়া হয়েছে সীতাভোগ মিহিদানাকে নিয়ে বিশেষ খাম।তবে বিদেশে সীতাভোগ ও মিহিদানা পাঠাতে গিয়ে প্যাকেজিং সমস্যায় পড়ে অ্যাসোসিয়েশন।
সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও সঠিক দিশা দেখাতে পারেনি কোনও সংস্থা। অবশেষে খড়গপুর আইআইটি এর দারস্থ হয় সংগঠন।সেখানেও ২-৩ মাস প্রীজাভ প্যাকেজিং সমস্যার সমাধান এখনও সঠিক দিশা না মেলায় নিজেদের উদ্যোগে ১০-১২ দিনের প্রিজার্ভ প্যাকেজিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে এই দুই মিষ্টান্ন।তাঁদের আশা ,খড়গপুর আইআইটির গবেষকরা খুব তাড়াতাড়ি প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে সঠিক দিশা দেখাবেন।
কথিত আছে, ১৯০৪ সালে বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দ মহাতাবকে রাজাধিরাজ উপাধি দেয় ইংরেজ সরকার। সেই উপলক্ষ্যে বর্ধমান রাজপ্রাসাদে এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলার তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন বর্ধমান সফরে আসেন। বড়লাটকে খুশি করার জন্য এবং অনুষ্ঠানকে আরও বিশেষ করে তোলার জন্য বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দের নির্দেশে দুটি একদম নতুন মিষ্টি তৈরি হয়—সীতাভোগ আর মিহিদানা। আর নতুন দুই মিষ্টির স্বাদ পেয়ে বড়লাট-সহ বাকি অতিথিরা খুব খুশি হয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। বর্ধমানের এক মিষ্টি প্রস্তুতকারক বিশেষ মিহিদানা ও সীতাভোগ তৈরী করেন।
সীতাভোগ তৈরির প্রধান উপাদান গোবিন্দভোগ চাল। গোবিন্দভোগ চাল থেকে প্রস্তুত হওয়ার কারণেই সীতাভোগের একটি নিজস্ব স্বাদ ও সুগন্ধ হয়। এই চাল গুঁড়ো করে প্রথমে তাতে ১:৪ অনুপাতে ছানা মিশিয়ে পরিমাণমত দুধ দিয়ে মাখা হয়। তারপর একটি বাসমতী চালের আকৃতির মত ছিদ্রযুক্ত পিতলের পাত্র থেকে ওই মিশ্রণকে গরম চিনির রসে ফেলা হয়। এর ফলে সীতাভোগ বাসমতীর চালের ভাতের মত দেখতে লম্বা সরু সরু দানাযুক্ত হয়। এর সঙ্গে ছোট ছোট গোলাপজাম এবং কখনো কখনো কাজুবাদাম ও কিশমিশ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।
আর মিহিদানা তৈরী করা হয় গোবিন্দভোগ চাল ও ছোলার বেসন দিয়ে।সীতাভোগ ও মিহিদানার হাত ধরে বিশ্বের বাজারে বর্ধমানের নাম ছড়িয়ে পড়ায় গর্বিত বর্ধমানবাসী।