কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: বৃষ্টির (Rain) আকাল। পর্যাপ্ত জলের অভাবে পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলা জুড়ে আমন ধান-চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে, বিদ্যুত্ (Electric) দফতরের সাহায্য নিয়ে সাব মার্সিবল পাম্প চালানোর চিন্তাভাবনা করছে জেলা প্রশাসন।
পূর্ব বর্ধমান যাকে বলা হয় বাংলার শস্যভাণ্ডার। এই সময় আমন ধানের চারা আর গাছে, সবুজ হয়ে থাকে জেলার বিস্তীর্ণ কৃষিখেত। কিন্তু এবছর, চোখে পড়ছে না এই দৃশ্য। কারণ, বৃষ্টির অভাব। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায়, বহু জমিতেই ধানের চারা রোয়া যায়নি। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের দাবি, জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে ৫৬.৮৮ শতাংশ। বর্ষা শেষ হতে চলল, অথচ বর্ধমানের অধিকাংশ ধানি জমি এখনও খাঁ খাঁ করছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, খরিফ মরশুমে পূর্ববর্ধমান জেলায় যেখানে প্রায় ৩ লক্ষ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়, সেখানে জুলাই মাস পর্যন্ত মাত্র ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা গেছে।
কী সমস্যা?
প্রশাসনের আশঙ্কা, এতে ভয়ানক ধানের আকাল দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত চাষ না হওয়ায়, অনেক খেত মজুর ও ভাগচাষিও কাজ পাচ্ছেন না। চরম আর্থিক দুর্দশায় রয়েছেন তাঁরা। কৃষক লক্ষ্মণ বন্দ্যাপাধ্যায় বলেন, বিদ্যুতের মাসুল এত বেশি। লোকের হাতে টাকা নেই। আরেক কৃষক চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শ্যালো পাম্পে চাষ করছি। জলই উঠছে না বেশি। আগে ১ ঘণ্টায় ৪ বিঘে জমি জল পেত। এখন ১ বিঘে.. এতে পানীয় জলের সমস্যা হবে।"
এই পরিস্থিতিতে, উপায় খুঁজতে, শুক্রবার, জেলাশাসকের দফতরে মিটিং ডাকা হয়। সেখানে ছিলেন কৃষি, সেচ, বিদ্যুত্ দফতরের আধিকারিকরা। ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও DVC’র প্রতিনিধি। সূত্রের খবর, মিটিংয়ে বিকল্প হিসেবে, প্রথমে DVC’র সঞ্চিত জলের কথা ভাবা হয়।
আরও পড়ুন, 'গোপন বোঝাপড়ার জন্য দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী'! ইডি ইস্যুতে মমতাকে খোঁচা বিরোধীদের
ডিভিসির তরফে কী জানান হয়েছে?
কিন্তু DVC- সূত্রে খবর, জলাধারে যে পরিমাণ জল রয়েছে, তা কৃষিকাজে ব্যবহৃত হলে, পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে, বিকল্প হিসবে, রিভার পাম্প ও সাব মার্সিবল পাম্পের কথা ভাবা হচ্ছে। এব্যাপারে বিদ্যুত্ দফতরের সহায়তা চেয়েছে জেলা প্রশাসন।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা বলেন, "গোটা জেলায় এখনও পর্যন্ত খরিফ চাষে পিছিয়ে রয়েছে ৬৩ শতাংশ। মাত্র ৮০ হাজার হেক্টর এলাকায় খরিফ চাষ হয়েছে। চাষ হবে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ হেক্টর এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই চাষ বাঁচাতে তাঁরা বিদ্যুত দপ্তরের কাছে বিদ্যুত সংযোগ দেবার বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন।"
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, "জেলার চাষকে বাঁচাতে এদিন বিদ্যুত দপ্তরের কাছে দ্রুত আরএলআই বা নদীসেচ প্রকল্পগুলিকে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বেসরকারী মালিকানায় থাকায় সাবমার্শিবলগুলিকেও যাতে ন্যূনতম টাকা নিয়ে অস্থায়ীভাবে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছে।"
প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্ধমান জেলায়, সাব মার্সিবল পাম্পের সংখ্যা ২৮ হাজার ৯৬৩টি। যার মধ্যে চালু রয়েছে ১৩ হাজার ৪৯৬টি। বিদ্যুত্ দফতরের সাহায্য নিয়ে বন্ধ থাকা পাম্পগুলি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের।