রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: দুটি গ্রাম। আর এই দুটি গ্রামেরই ঘুম কেড়েছে ষাঁড়ের তাণ্ডব। দুই ষাঁড়ের আক্রমণে কেউ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউবা গুরুতর আহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ভয়ে ভয়ে দিন কাটছে পূর্ব বর্ধমানে কাটোয়ার মোস্তাপুর ও কালনার পূর্ব সাতগেছিয়া নামে দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের।


ভোলা ও মঙ্গলার দাপটে রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দুটি গ্রামেরই সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। অন্যদিকে বনবিভাগের আধিকারিকের বক্তব্য, ষাঁড় গৃহপালিত পশু।  তাই তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। যদিও কে কি বললো তাতে কিচ্ছু এসে যায় না ভোলা ও মঙ্গলার। দুজনে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের এলাকায়। 


কাটোয়ার মোস্তাপুর আর কালনার পুর্ব সাতগাছিয়া দুই গ্রামের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৬০  কিলোমিটার। দূরত্ব থাকলেও এই দুই গ্রাম এখন একই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কাটোয়ায় ভোলা আর কালনায় মঙ্গলা, এই দুই ষাঁড়ের দাদাগিরিতে অতিষ্ট গ্রামবাসী।


বেশ কয়েকদিন ধরেই কালনা  পূর্ব সাতগাছিয়া গ্রামের শান্তশিষ্ট মঙ্গলা হঠাৎ করেই সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হতে শুরু করে। সামনে দিয়ে কেউ গেলে মঙ্গলা শিং দিয়ে গুঁতোতে তেড়ে আসছে। তার হামলায় প্রায় কুড়ি জন আহতও হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বেমাক্কা খেপে মোটরবাইকেও হামলা চালায় সে। এভাবে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে মঙ্গলা।মঙ্গলার গুঁতোয় কারুর কারুর আঘাত কম হলেও,  অনেকেরই আঘাত বেশ গুরুতর। মঙ্গলার আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে কালনা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমীর রাজপুত নামে এক ব্যক্তি।  তাঁর চোয়ালে চোদ্দটি সেলাই পড়েছে, ভেঙেছে বেশ কয়েকটি দাঁত। এখন মঙ্গলার ভয়ে অনেকেই ঘরের বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছে না। 


৬০ কিলোমিটার দূরে কাটোয়ার মোস্তাপুর গ্রামেও সেই একই আতঙ্ক। তবে সেখানে মঙ্গলা নয়, সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যে ষাঁড়, তার নাম ভোলা। ভোলার আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ বছরের রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। গতকাল গোয়ালে কাজ করছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  সেই সময় হঠাৎই পেছন থেকে ভোলা এসে তাকে আছাড় মেরে ফেলে শিং দিয়ে গুঁতোতে থাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের। এই ঘটনার পর ভোলার আতঙ্গে শিঁটিয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। 


ভোলার এ ধরনের রুদ্রমূর্তি  নতুন নয়। আজ থেকে চার বছর আগেও ভোলার  আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন গ্রামের এক বৃদ্ধ। আবার সেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে ভোলা। মাঝে বেশ কয়েক বছর শান্ত থাকলেও ভোলার ফের তাণ্ডবে তটস্থ গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এর আগেও ভোলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল।তখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, এখনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। বারবার বনদপ্তরকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।  তবে বনদপ্তরের আধিকারিক সুকান্ত ওঝার বক্তব্য, গরু, ষাঁড় এগুলো গৃহপালিত পশু।  এরা বনদপ্তরের আওতায় পড়ে না। তাই এখানে তাঁদের কিছু করার নেই। অন্যদিকে  প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আধিকারিক ডাক্তার মনসুর আলির বক্তব্য, এই ধরণের ষাঁড় ধরা ও রাখার ব্যবস্থা তাঁদের নেই। দুই সরকারি দফতর এভাবে দায় এড়িয়েছে।    ফলে শিং উঁচিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভোলা আর মঙ্গলা।