কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান: বাঙালির কাছে সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) মানেই অঘোষিত ভ্যালেন্টাইস ডে। পাঞ্জাবি-শাড়ির যুগলবন্দি রাস্তায় রাস্তায় দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বয়েজ ও গার্লস হোস্টেলের মধ্যে তত্ত্ব আদান প্রদানের রীতি? হ্যাঁ, এমনই অবাক করে দেওয়া ঘটনা ঘটে থাকে বাগদেবীর আরাধনার দিন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (Burdwan University) গার্লস ও বয়েজ হস্টেলের মধ্যে তত্ত্ব আদান প্রদান এখানকার অনেক পুরনো রীতি। প্রতি বছরই এই বিশেষ দিনে ২ পক্ষের তরফে আপ্যায়ন করা হয়। 


সরস্বতী পুজোর এই বিশেষ দিনটিতে চিরাচরিত জিন্স-টপ, সালোয়ার-কুর্তা ছেড়ে গার্লস হোস্টেলের মেয়েরা শাড়ি পড়েন। খোঁপায় বাঁধেন ফুল। অন্যদিকে ছেলেরা এদিন পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ে থাকেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের মোট রয়েছে চারটি হস্টেল। সেগুলোর নাম চিত্তরঞ্জন, নেতাজি, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্র ও আইনস্টাইন। যা গোলাপবাগ ক্য়াম্পাসের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে মেয়েদের ক্যাম্পাসের নাম তারাবাগ ক্যাম্পাস। মেয়েদের পাঁচটি হস্টেল রয়েছে। যার নাম মীরাবাঈ, নিবেদিতা, প্রীতিলতা, সরোজিনী, গার্গী। 


রীতি মত প্রতি বছরই সরস্বতী পুজোর দিন প্রথমে ছাত্রদের হস্টেল থেকে ফল, মিষ্টি, চিপস, চকলেটে ভরা তত্ত্বের ডালি পৌঁছে যায় ছাত্রীদের হস্টেলে। গোটা বছর মেয়েদের হস্টেলে ছেলেদের ঢোকার কোনও অনুমতি না থাকলেও, এই একটা দিন গার্লস হস্টেলের বাইরে ছেলেদের আটকানোর জন্য কেউ থাকে না। শুধু ছেলেরাই তত্ত্ব নিয়ে যান না তা নয়। এরপর মেয়েদের পালা। আগের দিন রাত জেগে সাজানো তত্ত্ব নিয়ে তারাও পৌঁছে যান ছেলেদের হস্টেলে। 


আর তারপর, রাত জেগে নিজেদের সাজানো তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের দল পৌঁছে যায় অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন, নেতাজি, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্র কিংবা আইনস্টাইন হস্টেলে। সঙ্গে শঙ্খ, ঢাক। রাস্তায় সে এক দেখার মতো দৃশ্য। অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ে পথ ছেড়ে দেন ছাত্র-ছাত্রীদের। 


কী থাকে তত্ত্বতে? 


বিয়ে বাড়ির তত্ত্ব না হলেও এই তত্ত্ব ফল, মিস্টি,চকলেট,ক্যাডবেরি,নাটস্ সহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজানো থাকে তত্ত্বের ডালা। তত্ত্ব সাজানো আর আলপনা আঁকা, এই দুই কাজে ছাত্র-ছাত্রীরা এক হস্টেল আরেক হোস্টেলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় রীতিমত। অলিখিত এই প্রতিযোগিতার মাঝে যেন বন্ধুত্বের বন্ধন আরও শক্ত হয়।


প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে সরস্বতী পুজো করলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে, সরস্বতী পুজোর অনুমতি না দেওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন মদন মিত্র।