কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : মোটা টাকার বিনিময়ে রেলের গ্রুপ C ও গ্রুপ D পদে চাকরির টোপ দেওয়ার অভিযোগ। রেলের ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে বড়সড় প্রতারণা চক্রের (Fraud Racket) পর্দাফাঁস করল বর্ধমান RPF। ঘটনায় চক্রের মূল পান্ডা-সহ ৭ জনকে গ্রেফতার (Arrested) করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বর্ধমান রেলওয়ে ইনস্টিটিউটে অভিযান চালিয়ে আরপিএফের অফিসাররা তাদের গ্রেফতার করেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার চাকরিপ্রার্থীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর্ধমান রেল স্টেশনের আরপিএফ পোস্টে নিয়ে আসা হয়।


RPF সূত্রে জানা গেছে, অভিযান চালানোর সময় ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- টিসি/টিই (গ্রুপ-সি) পদের জন্য দেবজিৎ মালি নামে এক প্রার্থীর জন্য তৈরি করা তিন পাতার একটি জাল নিয়োগপত্র। ভারতীয় রেলের গ্রুপ-ডি পদের জন্য ৬টি জাল নিয়োগ ফর্ম, সাতটি জাল RRB OMR শিট, একটি জাল জয়েনিং রেজিস্টার, এক প্রার্থীর জাল ফিঙ্গার প্রিন্ট রেজিস্টার, একটি জাল হাজিরা রেজিস্টার। এছাড়া তিনটি চার পাতার প্রশ্নপত্র, তিনটি আইডি কার্ডের আবেদনপত্র, একটি রাবার স্ট্যাম্প( যেটি সেক্রেটারি আরআরসি কলকাতা ইস্টার্ন রেলওয়ে চিৎপুর কল-৩৭ এর নামে তৈরি করা হয়েছিল), একটি সিনিয়র পার্সোনেল অফিসার রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের রাবার স্ট্যাম্প, একটি ভারতীয় রেলওয়ের স্ট্যাম্প এবং একটি ফেবার ক্যাসেলের স্ট্যাম্প প্যাড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত সমস্ত নথিই প্রতারণা চক্রের মূল জিন্নাত আলি'র দায়িত্বে ছিল বলে আরপিএফ-এর তরফে দাবি করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্তদের কাছে থাকা মোবাইল ফোনগুলিও বাজেয়াপ্ত করেছে আরপিএফ।


RPF সূত্রে আরও জানা গেছে, ধৃতদের নাম শেখ জিন্নাত আলি ( বাড়ি- বর্ধমান শহরের দুবরাজদিঘিতে), অরূপ রতন মণ্ডল (বাড়ি- বর্ধমান শহরের ৩ নং ইছলাবাদ), রঞ্জিত কুমার সর্বজন ওরফে রঞ্জিত গাঙ্গুলি ( বাড়ি- বর্ধমান শহরের শ্রীপল্লি এলাকার নিবাস ময়দান), বিবেকানন্দ মুখার্জি (বাড়ি- কাটোয়া থানার বৈঁচি এলাকার সরগ্রাম), তারাশঙ্কর কুন্ডু (বাড়ি- গলসি থানার কোলকোল গ্রামে), প্রতুল কুমার রায় (বাড়ি- বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর), ফজলু শেখ (বাড়ি- দেওয়ানদিঘি থানার নুতনগ্রাম এলাকায়)। পরে আরপিএফ-এর তরফে ধৃতদের বর্ধমান থানার হেফাজতে দেওয়া হয়।


RPF- সূত্রে জানা গেছে, ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (CIB) মারফত বর্ধমানে একটি ভুয়ো চাকরি চক্রের খবর মেলে। তার ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টা থেকে বর্ধমান রেলওয়ে ইনস্টিটিউটের ওপর নজরদারি শুরু করে আরপিএফের একটি স্পেশাল টিম। হলের দরজা বন্ধ করে ভিতরে যখন অভিযুক্তরা প্রার্থীদের ট্রেনিং দেওয়ার নামে নিজেদের কাজকর্ম করছিল, সেইসময় আরপিএফের আচমকা অভিযানে অভিযুক্তরা হকচকিয়ে যায়। টেবিলে রাখা বেশ কিছু নথি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আরপিএফের অফিসারদের তৎপরতায় হল ঘরের ভিতরে উপস্থিত ৭জন প্রতারক ধরা পড়ে। তাদের সঙ্গে থাকা সমস্ত নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। রেলের গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে চাকরির টোপ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এদিন বর্ধমানের রেলওয়ে ইনস্টিটিউট ভাড়া করে আউশগ্রাম, বুদবুদ ও কেতুগ্রাম থেকে আসা বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীকে একত্রিত করা হয়েছিল। রেলের গ্রুপ ডি ও সি পদের চাকরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে দাবি করেছিল ধৃতরা। সেই মতো অনেকেই গত এক বছরে ধাপে ধাপে প্রায় এক লক্ষ টাকা করে প্রতারকদের মিটিয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে।