কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : দিন দিন চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে উঠছিল ! সাধুর পরামর্শে দুষ্টু ছেলেকে শান্ত করতে ভর সন্ধেয় দামোদরের (Damodar) চরে রেখে এসেছিলেন বাবা-মা। স্থানীয় গ্রামবাসীর তৎপরতায় অবশ্য উদ্ধার করা হয় সেই শিশুকে। ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Burdwan) রায়না থানার পুলিশ শিশুর বাবা, মা ও মামার বাড়ির দাদুকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে। একইসঙ্গে আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হয়েছে। এরপর শিশুকে শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে পেশ করা হলে তাকে হুগলির সিঙ্গুরের একটি হোমে পাঠানো হয়।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভর সন্ধেয় ওই শিশুকে দামোদরের পাড়ে ঘুরতে দেখেন ফেরিঘাটের যাত্রীরা। রাত গভীর হতেই শিশুর কান্নায় চমকে ওঠেন রায়নার শিয়ালি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরা নদীর পাড় থেকে তাকে গ্রামে নিয়ে এসে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ শিশুকে উদ্ধার করে সব ঘটনার কথা জানতে পারে।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ছেলেটির বাড়ি নদিয়ার চাকদহে। মামার বাড়ি মেমারি থানা এলাকায়। মামার বাড়ির সূত্র ধরেই ছেলেটির পরিজনদের রায়নার শিয়ালি গ্রামের এক আশ্রমে যাতায়াত ছিল। প্রায় ২০ বছর ধরে শিয়ালিতে আশ্রমটি রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ওই শিশু পুলিশকে জানিয়েছে, আশ্রমের সাধুর কথাতেই তার বাবা, মা ও দাদু নদীর পারে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন। 


এমনকি তাকে উদ্ধারের সময় পুলিশ জানতে পারে, ওই আশ্রমেই শিশুর মা রয়েছেন। সেই মতো পুলিশ ওই আশ্রমে খোঁজ নিতে গেলে বাধা পায়। পুলিশের দাবি, আশ্রমের মহিলা ভক্তরা তাদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখেছিলেন। পরে আরও পুলিশ গিয়ে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রায়না থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে ওই মহিলাকে প্রথমে গ্রেফতার করে। পরে শক্তিগড় থেকে কিশোরের বাবা ও মামার বাড়ির দাদুকেও গ্রেফতার করে।


পুলিশের দাবি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শিশুর মা জানান, আশ্রমের উপর তাদের অগাধ ‘বিশ্বাস’। বেশ কয়েকবার আশ্রমের জন্যেই তাঁদের ছেলে বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। ছেলে দিনের পর দিন চঞ্চল হয়ে উঠছে, তা শোধরানোর জন্যেই তাঁরা নদিয়া থেকে ওই আশ্রমে এসেছিলেন। নদীর পাড়ে ছেলে রাত কাটালে নাকি তার দুষ্টুমি কমে যাবে, সে কথা শুনেই বিশ্বাসভরে ছেলেকে নদীর পাড়ে রেখে দিয়ে চলে এসেছিলেন।


ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রায়না থানার পুলিশ। এনিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ওম প্রকাশ সিং বলেন, বাচ্চারা এই বয়সে চঞ্চল হবেই। বাড়াবাড়ি কিছু হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার সমাধানও আছে। কিছু কিছু মানুষ আস্থা নিয়ে এদের কাছে যায়, আর তাদের অন্ধবিশ্বাসের জন্য এইসব ফেথহিলাররা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়। এই কুসংস্কার থেকে বের হতে হবে।