কাঁথি: তৃণমূলে সাংসদ পদ ধরে রেখে দলের বিরুদ্ধাচারণ করছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শাসকদলের। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই কাঁথিতে রাজ্য পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা তৃণমূল (TMC) সাংসদ শিশির অধিকারীর (Sisir Adhikari)। একই সঙ্গে ছেলে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari), যিনি কিনা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, তাঁকে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন।
ছেলে শুভেন্দু অধিকারীকে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন শিশির
কাঁথিতে সরস্বতী পুুজোর অনুষ্ঠানে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন শিশির। তিনি বলেন, "কাঁথি জন্ম দিয়েছে শুভেন্দুর, যে শুভেন্দু আজ বাংলার মানুষকে আলো দেখাচ্ছেন। শুভেন্দু তাঁর সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে গণতান্ত্রিক জগৎকে আলোকিত করে রেখেছেন।" পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তোলেন শিশির। তিনি বলেন, "কাঁথিতে বাস করতে হলে নাকি পুলিশকে স্যালুট করে চলতে হয়! কেউ অন্য দল করলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে হাজির হচ্ছে, ডেকে আনছে পুলিশ। পয়সার একেবারে বন্যা বইছে। কত টাকা ঘুষ নিয়েছেন...বুকটা ফেটে যায় পবিত্র কাঁথিতে এ সব দেখে।"
শিশিরের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "উনি বর্ষীয়ান সাংসদ। কিন্তু জনসভা বা সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে যে কথা বলছেন, তা নিয়ে কি অভিযোগ জানিয়েছেন কারও কাছে? তিনি তো সাংসদ! নিয়ম মেনে, আইন মেনে চলবেন তো! তর্কের খাতিরেও যদি ধরে নিই যে বেআইনি কাজ হয়েছে, সে পুলিশি হোক না কেন, সাংসদ হিসেবে তো উপযুক্ত জায়গায় গিয়ে অভিযোগ জানানো উচিত। হাওয়া গরম করা তো তাঁর কাজ নয়। সমাজে যাতে বিচার হয়, দেখা উচিত। তা করেননি তিনি। কারণ অধিকারী পরিবারের সকলে মনে করে নেন, কাঁথি জায়গাটি হল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সেখানকার সম্রাট, রাজা তাঁরা। আগে তো শুনতাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মায়ের মতো! শুভেন্দু অধিকারী বাংলাকে আলো দেখিয়েছেন বলছেন! বাংলা কিন্তু জানে যে, শুভেন্দু অধিকারী দিল্লির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে, বাংলাকে ভাতে মারার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে বাংলার কৃষকরা টাকা না পান, ১০০ দিনের টাকা না আসে, বাংলার পড়ুয়ারা মিড ডে মিল না পায়।"
আরও পড়ুন: Didir Doot : ফের ক্ষোভের মুখে 'দিদির দূত' শতাব্দী, গাড়ি আটকে অভিযোগ বৃদ্ধার
জয়প্রকাশ আরও বলেন, "এই কুচক্রের নায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সেটিকে যদি শিশির অধিকারী আলো বলে মেন করেন, এক পরিবারের বলে, তাহলে কিছু বলার নেই। সকলে জানেন, শুভেন্দু অধিকারী বাংলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বাংলার কলঙ্ক তিনি যে বাংলাকে ভাতে মারতেই বার বার দিল্লির লোকজনকে বলছেন। বাংলার একজন মানুষও শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করেন! আসলে শিশিরবাবুর পৃতৃস্নেহ। তবে শিশিরবাবুরও ঠিক করে নেওয়া উচিত, তিনি কোন দলে রয়েছেন, কাকে নেতা মানেন।"
কাঁথিতে সরস্বতী পুজোর মঞ্চে শুভেন্দুর প্রশংসা শিশিরের
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "শিশির অধিকারী অনেক পুরনো কংগ্রেসের নেতা। বামফ্রন্টের সময়ও কংগ্রেস নেতা ছিলেন। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তৃণমূলের নেতা হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাত ধরে মেদিনীপুর, নন্দীগ্রাম চিনিয়েছেন। ফলে উনি তো সবটা বলতে পারবেন কী দাঁড়িয়েছে। উনি যখন তৃণমূলের নেতা ছিলেন, প্রশাসন বিরোধীদের আক্রমণ করলে হয়ত খুশি হতেন। এখন বুঝতে পারছেন, তৃণমূলের রাজত্বে পুলিশের আক্রমণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। একটাই কথা বলব, এই ভয়াবহ আক্রমণ যা বলছেন উনি, তা সর্বৈব ঠিক। কিন্তু তৃণমূল যখন এই আক্রমণ করতেন এবং উনি যখন তৃণমূল ছিলেন, বাম আমলে পুরসভা চালিয়েছেন, কেউ দখলদারি করেনি। আর আজ তৃণমূলের লোক হওয়া সত্ত্বেও দখলদারির রাজত্ব চালাচ্ছে তৃণমূল। সরকারি ভাবে এখনও তৃণমূলের সাসংদ। বুঝতে পারছেন, কী ভয়াবহ শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন উনি। তবে একই রকম ভয়াবহ শক্তি বিজেপি ত্রিপুরায়। বয়স্ক মানুষ। উনি নিশ্চয়ই সেটাও খেয়াল রাখবেন!"