বিটন চক্রবর্তী, হলদিয়া: গাছে কাঁঠাল দেখে গোঁফে তেল দেওয়া নয়, তেলের নদীতে ডুবে কোমর পর্যন্ত। নেহাত শ্লেষধর্মী কোনও বাক্য নয়, বরং বাস্তবে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ল। হলদিয়ায় একটি ভোজ্য তেল প্রস্তুতকারক সংস্থার পাইপলাইন ফুটো হয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। তাতেই সারা বছরের তেল জোগাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। ঘড়া, বালতি, ঘটি যা পান হাতের কাছে, সব নিয়ে ছোটেন তেল ভরতে। (Haldia News)


পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় এই দৃশ্য় চোখে পড়ে বুধবার। সেখানে ইমামি অ্যাগ্রোটেক সংস্থার কারখানা রয়েছে। ওই কারখানায় ভোজ্যতেল, অর্থাৎ রান্নায় ব্যবহৃত তেল উৎপন্ন হয়। অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের পাইপলাইন ছড়িয়ে রয়েছে বন্দর থেকে কারখানা পর্যন্ত। সেই পাইপলাইন ফুটে হয়ে বিপত্তি গেখা দেয়। আর সেকথা চাউর হতেই হইচই পড়ে যায় চারিদিকে। (Edible Oil Stealing)


দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, পাইপলাইন ফুটো হয়ে তেল গিয়ে মিশছে সঙ্কীর্ণ একটি খালে। জলের উপর হলুদ রংয়ের, পুরু স্তরও পড়ে গিয়েছে তেলের। সেই তেল যতটা সম্ভব পাত্রে ভরে নিতে জলে নেমে পড়েছেন শয়ে শয়ে মানুষ। ঘড়া, বালতি, ঘটি, বোতল, বাড়ি থেকে যে যা পেরেছেন নিয়ে হাজির হয়েছেন। কোমর পর্যন্ত তাঁদের ডুবে রয়েছে তেলে-জলে। সেই অবস্থাতেই পাত্রে তেল ভরে নেওয়া চলছে।



ইমামি কর্তৃপক্ষের দাবি, গতকাল রাতে তেল চুরির জন্যই পাইপলাইন ফুটো করা হয়। এর পর সেখান দিয়ে তেল বেরোতে শুরু করে। সকালে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ওই সংস্থার দাবি, প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে তাদের। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বার ওই সংস্থার পাইপলাইন ফুটো হয়ে যায়, তার নেপথ্যেও তেল-চোরদের হাত ছিল বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। পাইপলাইনের ভালভ খুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। সেই অংশও উদ্ধার হয়েছে।


ইমামি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একাধিক বার এই ধরনের ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানান তাঁরা। পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারিও চলে। কিন্তু কিছু দিন পর আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। পাইপলাইন ফুটো করে এভাবে তেল চুরি করা হলে বড় বিপদের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শুধুমাত্র ভোজ্য তেল উৎপন্ন হয় না, রাসায়নিক কারখানাও রয়েছে, যেখানে অ্যামোনিয়ার মতো অতি দাহ্য পদার্থও রয়েছে। মিৎসুবিশির মতো কারখানায় মিথাইল থাকে। ফলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। 


হলদিয়া থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত ইমামির ভোজ্য তেলের কারখানা। রাতে সেখানে পাহারাও চলে। তার পরও এই ঘটনা ঘটল কী করে, উঠছে সেই প্রশ্নও। ইমামি তো বটেই, আরও একাধিক সংস্থায় বহু বার এমনটা ঘটেছে। ফলে পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।