নন্দীগ্রাম: শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস ঘিরে নন্দীগ্রামে ফের সম্মুখসমরে তৃণমূল এবং বিজেপি। একই ব্যানারে শাসক ও বিরোধীদলের আলাদা আলাদা স্মরণ সভা। ভোরের আলো ফোটামাত্র শহিদ স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে তৃণমূল। সাত সকালে শহিদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করলেন বিরোধী আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীও (Suvendu Adhikari)। তাঁর উদ্যোগেই শহিদ স্মরণের সূচনা, তৃণমূল পাঁচ জন শহিদের নামও বলতে পারবে না বলে দাবি করলেন তিনি।
রবিবার সকালে নন্দীগ্রামে শহিদ তর্পণে যোগ দেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি বলেন, "গড়চক্রবেড়িয়ায় তিনটি দোকান পাঁচ দিন বন্ধ রয়েছে। হিন্দু বলে দোকান বন্ধ রাখবেন! আজ সকালের মধ্যে দোকান যদি না খোলে, কী করতে হয় শুভেন্দু অধিকারী জানে। গড়চক্রবেড়িয়া কি মিনি পাকিস্তান হয়ে গিয়েছে? দোকান যদি না খোলে, আমাদের যেখানে ক্ষমতা আছে, যেখানে হিন্দু বেশি আছে, সেখানে অন্যদের ১০০টা দোকান বন্ধ করে দিতে পারি।" (Nandigram News)
তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য তৃণমূল অত্যাচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, "অশান্তি আমরা চাই না। আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য হিন্দু দেবব্রত মাইতিকে খুন রা হয়েছে। আমাকে ভোট দেওয়ায় একসঙ্গে ৪৫টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৭টি হিন্দু বাড়ি। আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য, হিন্দু হওয়ার জন্য টাউন ক্লাবে পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে। ভেবেছেন এগুলো আমি ছেড়ে দেব? তারিখ, সময় ধরে লিখে রেখেছি। আমার উপর ভরসা করুন। দেখছেন না ২০২১ সালে যে রোয়াব ছিল, এখন আছে? ইডি-সিবিআইয়ের গোঁতায় এখন ধর্মবাপ রক্ষা করো।"
আরও পড়ুন: Sandeshkhali Chaos: খোঁজ নেই তৃণমূল নেতার আত্মীয়দের, বাড়িতে তালা, এখনও থমথমে সন্দেশখালি
তৃণমূলকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, "দেখছেন না মাতব্বররা কেউ নেই, এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। আগে, বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর গেলেই কালো পতাকা দেখাত। আমি সব লিখে রেখেছি। আমি সোনাচূড়ার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাকে শেষ রাউন্ডে জিতিয়ে দিয়েছেন। ৩২০০ লিড দিয়ে চোর মমতাকে হারিয়েছেন। আর যাঁরা মমতাকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, কলকাতার লোকরা। সোনাচূড়ার, নন্দীগ্রামের মতো করতে পারলে এমন হতো না বলে মনে করছেন ওঁরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সব ঠান্ডা হয়েছে তো! আরও ঠান্ডা হবে। কাশ্মীরের থেকেও বেশি ঠান্ডা করে দেব। চিন্তার কোনও কারণ নেই।"
গতকাল ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে তৃণমূলের অনুষ্ঠান মঞ্চের পাশেই ‘কুণাল ঘোষ গো ব্যাক’ লেখা পোস্টার লেখা দেখা যায়। শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে শুভেন্দুকে নিশানা করেন কুণাল ঘোষ। বিজেপি ভয় পেয়েছে বলে কটাক্ষ করেন কুণাল। তৃণমূলের সেই অনুষ্ঠানস্থল থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে নন্দীগ্রাম দিবস কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। ভাঙাবেড়া শহিদ মিনারে এদিন মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বিরোধী দলনেতা।
২০০৭-এর ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বিশ্বজিৎ মাইতি, শেখ সেলিম ও ভরত মণ্ডলের। সেই থেকে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি এই দিনটিকে শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর, তৃণমূল ও গেরুয়া শিবিরের তরফে পৃথক ভাবে এই দিনটি পালন করা হয়।