বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: মিড-ডে মিল রান্না হবে। কিন্তু জল কোথায়? স্কুলের টিউবওয়েল খারাপ থাকায় জল উঠছে না। তাই জল আনার দায়িত্ব নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরাই। ভ্যান রিকশা জোগাড় করা হয়েছে। তাতেই জল নিয়ে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার গোপীমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা এমনই। এই কারণে ধাক্কা খাচ্ছে পঠনপাঠন। সমস্য়া হচ্ছে পড়ুয়াদের। 


রাজ্যজুড়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক গ্রেফতার হয়েছে। চাকরি বাতিল হয়েছে। নানা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। সেখানেই সামনে আসছে বিভিন্ন জেলায় থাকা বিভিন্ন স্তরের স্কুলগুলোর বেহাল পরিস্থিতির ছবি। পাঁশকুড়ার গোপীমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ও সেই তালিকারই একটি নাম।


পাঁশকুড়ার গোপীমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মিড-ডে মিলের জল টেনে আনতে হচ্ছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একবছর ধরে স্কুলের টিউবওয়েল খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এখন গরম শুরুও হয়নি তেমন, তার মধ্যেই এলাকায় থাকা অন্য টিউবওয়েলে জল উঠছে না। ফলে সমস্যা বেড়েছে আরও। বাধ্য হয়ে স্কুল কোনওমতে সামলে নিয়ে পানীয় জল আনতে ভ্যান নিয়ে দূরে ছুটতে হচ্ছে শিক্ষকদের। যেতে হচ্ছে পাশের গ্রামে। মিড ডে মিলের পরিষেবা চালিয়ে যেতে পঠন-পাঠনের আগে এভাবেই জল বইতে ব্যস্ত থাকেন পাঁশকুড়ার গোপীমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অভিযোগ, বহু আর্জিতেও মেলেনি সাব মার্সিবল পাম্প।


একশো বছরেরও বেশি পুরনো স্কুল:
১৯০১ সালে স্থাপিত হয় এই স্কুলটি। এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ১১৯ জন। ছয় জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। জল নিয়ে এলে তাহলেই মিড-ডে মিল রান্না, বাসনপত্র ধোওয়ার কাজ চলে। স্কুলে পানীয় জল পাওয়া যায় না দেখে অধিকাংশ অভিভাবক পড়ুয়াদের জল ভর্তি বোতল সঙ্গে দেন। অভিভাবকদের দাবি দ্রুত এই জলের সমস্যার সমাধান হোক। জলের দাবি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ। 


রাজনৈতিক তরজা:
এই ঘটনা সামনে আসায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির কেশাপাট মন্ডলের সম্পাদক সৌমিত্র সেতুয়ার দাবি, 'বিষয়টি একেবারেই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। পাঁশকুড়া ব্লকের একাধিক জায়গায় এই জলের সঙ্কট হয়েছে। তৃণমূল নেতারা কাটমানি তোলাতে ব্যস্ত তাই এইসব দিকে দেখার তাঁদের নজর নেই। এদের মূল লক্ষ্য কাঠমানি তোলা শিশু পরিষেবা দেওয়া নয়। বিডিও এবং এসআই-এরা প্রত্যেকে তৃণমূলের ক্যাডার। এরাও কাটমানির সঙ্গে যুক্ত। এরা তৃণমূলের কথাতেই চলবে।' যদিও সমস্ত বিষয় অস্বীকার করেছে শাসক শিবির। তৃণমূল পরিচালিত কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ সাঁতরা বলেন, 'বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আর দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ওয়াটার লেভেল নীচে নেমে গিয়েছে। আমার কাছে এই বিষয়ে সেই ভাবে কোনও খবর নেই। আর বিডিও স্যার আমাকে এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য নেই। আর বিজেপি ভুল অভিযোগ নিয়ে আসছে অঞ্চলে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে সাধারণ মানুষ তা জানে।'


আরও পড়ুন:  হুগলিতে তৃণমূল কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ ১৭ জনের চাকরি, অভিযোগ সুকান্তর