বিটন চক্রবর্তী ও সুদীপ চক্রবর্তী, তমলুক : কোটিপতি পান ব্যবসায়ীর নাম উঠেছে আবাস যোজনার তালিকায়। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে তালিকা নিয়ে শুরু শোরগোল। তদন্তে নেমে নাম কেটে দিলেন জেলাশাসক। অভিযুক্ত পরিবারের দাবি, আগে অবস্থা ছিল 'নুন আনতে পান্তা ফুরনোর', এখন ভাল চলছে ব্যবসা। তাই তৈরি হয়েছে পাকাবাড়ি। ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


পলিথিনের বাড়ি এবং 'নুন আনতে পান্তা ফুরনো' অবস্থা এখন অতীত। মাথা তুলেছে বহুতল। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রাসাদোপম বাড়ির দাম কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তা সত্ত্বেও বাড়ির মালিকের নাম ছিল আবাস যোজনার তালিকায়। নাম কেটে দিয়েছেন খোদ ডিএম।

বাড়িটি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের গণপতিনগর নগরের বাসিন্দা অভিজিৎ মণ্ডলের। পরিবারের দাবি, পানের ব্যবসা মাথা তুলে দাঁড়ানোয় হাল ফিরেছে। গৃহকর্তার পুত্রবধূ বলেন, "আমাদের যখন এটা অ্যাপ্লাই করা হয়েছিল তখন সেটা ছিল ২০১৮ সাল। তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, তখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যাকে বলা হয়। সেই সময় আমাদের ব্যবসা এতটাই খারাপ ছিল যে একদম পলিথিন দিয়ে বাড়িঘর ছিল।"


তিনি আরও বলেন, "এখন এত বছর পরে, মানে রীতিমতো ৬ বছর হতে চলে, যেখানে মানুষের আর্থিক অবস্থা তো একটু উন্নতি ঘটতেই পারে। এখানে লোন করে যা কিছু হোক করে যে ব্যবসাটা যে একটু দাঁড়িয়েছে, তারপরে এই বাড়িঘরটা করা হয়েছে।"

ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক দেবব্রত পট্টনায়ক বলেন, "এটা কোনও নতুন ঘটনা নয়। ২০ হাজার, ৩০ হাজার, ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘর পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা ক'তলা বাড়ি আছে তার ওপর নির্ভর করে না। কে কতটা কাটমানি দেবে, তার ওপরই তালিকায় নাম থাকবে।"


যদিও তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মাইতি বলেন, "উনি গরিব ছিলেন, তখন আবাস যোজনায় নামটা ছিল। যে কারণেই হোক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য তৃণমূল কংগ্রেস ওই পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি। বিজেপি নেতারা এই আবাস যোজনায় নাম আছে দেখেই, তৃণমূল কংগ্রেসের এই যে আবাস যোজনায় দুর্নীতি প্রমাণ করার জন্য নামটা কাটেনি।"

তমলুকে যখন এই ছবি, পাঁশকুড়া এলাকায় তখন উঠেছে আবাস যোজনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ। ভাঙাচোরা দেওয়াল, দরমার বেড়া। এমন ঘরেই কোনওভাবে দিন গুজরান। পাঁশকুড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আনসুরা বেগম বলেন, "আমি বিডিও-তেও গেছি একবার, পঞ্চায়েতকেও বলছি, আজ কত বছর, আজ দশ বছর হবে। আমার ঘর নেই, আমাকে দেবে না, আমার স্বামী নেই, কত কষ্টে আছি। আমার ছিটাবেড়ার ঘর, আমাকে একটু ঘর দাও না। কেউ গ্রাহ্য করছে না।"


পাঁশকুড়ার অপর এক বাসিন্দা হাজরা বিবি বলেন, "অঞ্চলে, বিডিও অফিসে সবার কাছে আমি যাচ্ছি, কিন্তু কেউ আমার কথাকে গ্রাহ্যও করছে না, আর আমাকে দিচ্ছেও না। আমার চেয়ে বড় লোকরা, যাদের পাকাবাডি আছে, যাদের অবস্থা ভাল, তাদেরকে দিচ্ছে, তাদেরকে দেখছে। কিন্তু আমাকে একটুও লক্ষ্য করছে না।"

পরিস্থিতি সামাল দিতে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুজিত রায় বলেন, "যাঁরা বন্যয় ক্ষতিগ্রস্ত, যাঁদের আবাস যোজনার লিস্টে নাম আছে, তাঁরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী। আর যাঁদের আবাস যোজনায় নাম নেই, তারপরেও বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, তাঁরাও আবেদন করেছেন, তাঁদেরকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিপর্যয়ের যে ক্ষতিপূরণ তা তাঁরা পাবেন।"

অন্যদিকে, আবাস যোজনার কাটমানি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এবার তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধেই ধর্না শুরু করল তৃণমূল। প্রকাশ্যে এসে পড়ল তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল। উত্তর দিনাজপুরের কমলাগাঁও সুজালি অঞ্চলে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের ধর্না।

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রধান নুরি বেগম, তাঁর স্বামী ও দেওরকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা নেতৃত্ব। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রধান।