পুরুলিয়া: ঝালদা পুরসভার (Jhalda Municipality) পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন পূর্ণিমা কান্দু। আদালতের নির্দেশে দায়িত্ব নিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু (Purnima Kandu)। গোটা ঘটনায় ফের একবার মুখ থুবড়ে পড়ল রাজ্যের শাসক দল। 


দায়িত্ব নিলেন পূর্ণিমা কান্দু: বিগত পুর নির্বাচনের পর থেকেই ঝালদা পুরসভার বোর্ড দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়ন চলছে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে। বিষয়টি গড়ায় কলকাতা উচ্চ আদালত পর্যন্ত । অবশেষে কলকাতা উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে ঝালদার পুর প্রধানের পদে নিযুক্ত করা হয় কংগ্রেস কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দুকে । ঘটনাই খুশির আমেজ হাত শিবিরে ।


এ যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। একবছর আগে ঝালদা পুরসভার বোর্ড গঠনের আগে, হারিয়েছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর স্বামীকে। তিনি পূর্ণিমা কান্দু। ঝালদা পুরসভার নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী। একবছর আগে কান্নাভেজা চোখেই স্বামীর হত্য়ায় বিচারের দাবিতে সরব ছিলেন তিনি। নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী। এখন আপাতত তাঁর হাতেই সেই ঝালদা পুরসভার রাশ। এদিন দায়িত্ব নিলেন তিনি।


গত পুরভোটে ১২ আসনের ঝালদা পুরসভার ভোটে ৫টি করে আসন ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূলের।  ২টি আসনে জেতেন নির্দল প্রার্থী। পুর-বোর্ড গঠনের ঠিক মুখে, ১৩ মার্চ, গুলি চালিয়ে খুন করা হয় ঝালদার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুকে। নির্দল প্রার্থী, শীলা চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। নির্দল থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেও, কিছুদিনের মধ্য়েই তৃণমূল ছাড়েন শীলা চট্টোপাধ্যায়। ১৩ই অক্টোবর, ৫ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর ও ২ নির্দল কাউন্সিলর মিলে তৃণমূলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। ২১ নভেম্বর, ঝালদা পুরসভায় আস্থা ভোটে হেরে যায় তৃণমূল। ২ নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থনে বোর্ড গড়ার তোড়জোড় শুরু করে কংগ্রেস। কিন্তু, নতুন পুরবোর্ড গঠনের আগের রাতেই, ঝালদা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর জবা মাছোয়ারকে, মনোনীত চেয়ারম্যান হিসেবে, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।



বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত, এই পদে থাকবেন তৃণমূল কাউন্সিলর। ৩ ডিসেম্বর, নির্দল কাউন্সিলর শীলা চট্টোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেয় কংগ্রেস। এর মধ্যে রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কংগ্রেস হাইকোর্টে যায়। ৫ ডিসেম্বর, সেই মামলার শুনানিতে, রাজ্য সরকারের মনোনীত চেয়ারম্যান বসানোর সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেও, জেলাশাসকের হাতে পুরসভার দায়িত্ব তুলে দেয় হাইকোর্ট। সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় কংগ্রেস। ২২ ডিসেম্বর ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, আপাতত জেলাশাসকের হাতেই থাকবে পুরসভার দায়িত্ব। একই সঙ্গে মামলাটি ফের সিঙ্গল বেঞ্চে ফেরত পাঠিয়ে দেয় আদালত।



অবশেষে ১৩ জানুয়ারি, বিচারপতি অমৃতা সিন্হা নির্দেশ দেন, ১৬ জানুয়ারি জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে, ঝালদার পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে। সেই মতো গত সোমবার, কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নির্দল কাউন্সিলর শিলা চট্টোপাধ্যায়।  কিন্তু বুধবার, সেই পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করেন মহকুমাশাসক। সেই মামলাতেই শুক্রবার মুখ পড়ুল রাজ্য সরকারের। অমাবস্য়ার আঁধার কাটিয়ে, তাই জয়ের হাসি পূর্ণিমার মুখেও।


আরও পড়ুন: East Midnapore News: ভিন্ন রাজ্যে মৃত্যু ৩ পরিযায়ী শ্রমিকের, কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা, অভিযোগ দায়ের পরিবারের