সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন গতকালই। এক শবর যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার প্রাক্তন ওসি-কে আট বছরের কারাদণ্ড দিল পুরুলিয়া জেলা আদালত (Purulia News)। তবে প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেলেন এএসআই অজয় সেন। বিগত ২৫ বছর ধরে এই মামলা চলছিল (Sabar Youth Death)। 


প্রাক্তন ওসি-কে আট বছরের কারাদণ্ড দিল পুরুলিয়া জেলা আদালত


ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।  পুরুলিয়ার বরাবাজারের অকরবাইদ গ্রামের বাসিবন্দা ছিলেন শবর যুবক বুধন শবর (২৯)। চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধন ওরফে বুধুকে আটক করে বরাবাজার থানার পুলিশ। অভিযোগ, বুধুর ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয় থানায়। গ্রেফতার দেখিয়ে দু'দিন পর ধৃতকে পেশ করা হয় আদালতে।


বুধনের পরিবারের দাবি, আদালত জেল হেফাজতে পাঠানোর পর পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বুধনের। জেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, আত্মহত্যা করেছেন ধৃত। যদিও পরিবার ও পশ্চিমবঙ্গ শবর-খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি অভিযোগ করে, পুলিশি অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে যুবকের। পশ্চিমবঙ্গ শবর-খেড়িয়া কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা প্রশান্ত রক্ষিতের কথায়, "১০ তারিখ গ্রেফতার করে। কোর্টে পেশ করে ১২ তারিখ। দু'দিন ধরে দিন মারাত্মক অত্যাচার করে। পরে তা প্রমাণিত হয়।"


আরও পড়ুন: Tapas Mondal Background: প্রতারণার পূর্বপাঠ: বাম আমলে চিটফান্ড ব্য়বসা, যেতে হয়েছিল শ্রীঘরেও, টাকা রোজগারে বরাবরই সিদ্ধহস্ত তাপস!


সেই সময় দ্বিতীয় বার বুধনের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানায় পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া-শবর সমিতি। তাঁদের হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ শবর-খেড়িয়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহাশ্বেতা দেবী। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার তদন্তভার যায় সিবিআই-এর হাতে।


এর পর, ২০০১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বরাবাজার থানার ওসি অশোক রায় এবং তৎকালীন এএসআই অজয় সেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। শুক্রবার সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন অশোক। সোমবার তাঁকে কারাদণ্ড শোনায় আদালত। কিন্তু প্রমাণের অভাবে খালাস পেয়ে গিয়েছেন অজয়।


পুলিশের অত্যাচারেই মৃত্যু, অভিযোগ ছিল পরিবারের


দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে ন্যায্য বিচারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বুধনের পরিবারের সদস্যরা। এত বছর পর ওসি-র শাস্তি শুনে চোখে জল এসে যায় তাঁদের। এক জনের বিরুদ্ধে যদিও প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু ওসি সাজা পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি তাঁদের। কিন্তু ২৯ বছরের তরতাজা একটি প্রাণ, থানার লকআপে শেষ হয়ে গেল, আর তার বিহিত হতে ২৫ বছর লেগে গেল, এখনও বিষয়টি সহজ হচ্ছে না অনেকের কাছেই।