সৌভিক মজুমদার, সন্দীপ সমাদ্দার, কলকাতা: স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকো (Calcutta High Court)। কংগ্রেসের (Congress) ডাকে সোমবার আস্থাভোট হল না ঝালদা পৌরসভায় ( Jhalda Municipal Corporation)। তৃণমূল (TMC) পরিচালিত পৌরসভার, ভাইস চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত মতোই আস্থাভোট হবে আগামী ২১ নভেম্বর। নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা।
ভাইস চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত মতোই আস্থাভোট হবে আগামী ২১ নভেম্বর
চারপাশে শুধু পুলিশ আর পুলিশ। আস্থা ভোটের সম্ভাবনা থাকায়, সোমবার কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছিল পুরুলিয়ার ঝালদা পৌরসভা। অশান্তি এড়াতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারাও। কিন্তু সোমবার শেষমেশ আস্থাভোট হল না ঝালদা পৌরসভায়। কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাদের ডাকা সোমবারের আস্থাভোটে স্থগিতাদেশ জারি করল আদালত।
তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভার, ভাইস চেয়ারম্যানের প্রস্তাব মতো আস্থাভোট হবে ২১ নভেম্বরই। নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা। ঝালদা পৌরসভার ভাইল চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা সুদীপ কর্মকার বলেন, "আমরা কোর্টে এসেছিলাম, জিতেছি। আমি নিয়ম মেনেই ৭ দিনের মধ্যে ডেকেছি। বিরোধীরা অবৈধভাবে আস্থা ভোট ডেকেছিল। সেটা বাতিল করা হয়েছে।"
পুরুলিয়ার কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, "হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিচ্ছি, কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান যে ২১ নভেম্বর অনাস্থার কথা বলেছিলেন, নিয়ম হচ্ছে ৭ দিনের মধ্যে করতে হবে। তা না করে ২১ নভেম্বর তারিখ দিয়েছেন। চাইলে এক বছর পর করতে পারেননি। এটা আমরা হাইকোর্টকে কনভিন্স করতে পারিনি, তাই আগামী বুধবার হাইকোর্টে যাচ্ছি।"
১২ ওয়ার্ডের ঝালদা পৌরসভার বোর্ড গঠন নিয়ে তৃণমূল-কংগ্রেস দ্বৈরথের মধ্যেই, গত ১৩ মার্চ খুন হন কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী তপন কান্দু। তা নিয়ে চরমে ওঠে দু’দলের দ্বন্দ্ব। এরই মধ্যে নির্দল প্রার্থী শীলা চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। কংগ্রেসের কাউন্সির ছিল ৫ ও নির্দল ১।
কিন্তু সম্প্রতি শীলা চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ত্যাগ করায়, আবার পুরনো সমীকরণ ফিরে আসে। আগের মতোই কংগ্রেস ও তৃণমূলের দখলে থাকে ৫টি করে আসন ও নির্দল ২। শীলার বক্তব্য ছিল, "আমি নির্দলেই আছি। তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করতে না পেরে ফিরে এসেছি। অনাস্থার পক্ষেই আছি।"
শীলা চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূল ত্যাগের পর গত ১৩ অক্টোবর, চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে কংগ্রেস। কিন্তু, ৩ নভেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা সুদীপ কর্মকার ই-মেল মারফৎ কাউন্সিলরদের জানান, ২১ নভেম্বর আস্থাভোট হবে।
কিন্তু পরের দিন (৪ নভেম্বর) ৩ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর, ৭ নভেম্বর অর্থাৎ সোমবার আস্থা ভোটের নোটিস জারি করেন। কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান ভাইস চেয়ারম্যান সুদীপ কর্মকার। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে ভাইস চেয়ারম্যানের আইনজীবী ও প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতকে জানান, ১৩ অক্টোবর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। নিয়ম অনুযায়ী তার ১৫ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করতে হয় চেয়ারম্যানকে। চেয়ারম্যান পদক্ষেপ না করায়, ২৮ অক্টোবর ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানান বিরোধী কাউন্সিলররা। আইন অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করতে হয় তাঁকে। সেই মতোই, ৩ নভেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান জানান, ২১ নভেম্বর হবে আস্থাভোট।
এর পরই বিরোধীদের ডাকা, সোমবারের আস্থা ভোটের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন বিচারপতি। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী বলেন, "হাইকোর্ট আজকের আস্থা ভোটের নোটিস অগ্রাহ্য করেছে। কিছু প্রযুক্তিগত কারণের জন্য...। কিন্তু সত্যিটা হল, যখনই মিটিং হোক না কেন শাসকদল পরাস্ত হতে চলেছেন।"
সোমবারের আস্থা ভোটের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন বিচারপতি
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের তৃণমূল নেতা তথা কো মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কথায়, "২১ তারিখ আমরা প্রমাণ করে দেব, তৃণমূল কংগ্রেস বোর্ড গঠন করবে। আমাদের রণকৌশল আগে থেকে মিডিয়ায় বলব না, সেটা ২১ তারিখ দেখিয়ে দেব।"
শেষমেশ কি ২১ নভেম্বরই আস্থা ভোট হবে? তৃণমূলের হাতে থাকবে ঝালদা পৌরসভা? না কি কংগ্রেস ছিনিয়ে নিতে পারবে? সেদিকেই নজর সবার।