সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: পুলিশ-পাহারায় স্কুলে মিড ডে মিল রান্না! শনিবার এই বিরল দৃশ্য দেখা গেল পুরুলিয়ার ঝালদার প্রত্যন্ত এলাকার একটি স্কুলে। মিড ডে মিল রান্নার বরাত কে পাবে? তা নিয়ে একই গ্রামে আটটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজিয়া! হাইকোর্টের রায় একপক্ষের দিকে যেতেই, বিরোধিতায় সরব আরেক পক্ষ। অশান্তি এড়াতে মিড ডে মিল রান্না হল পুলিশের নজরদারিতে।


পুলিশ-পাহারায় স্কুলে মিড ডে মিল রান্না: স্কুলের হলঘরে পড়ুয়াদের জন্য রান্না হচ্ছে মিড ডে মিল। আর মিড ডে মিল রান্না নিয়ে যাতে কোনও অশান্তি না হয়, তার জন্য বাইরে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। গোটা স্কুলচত্বর একেবারে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।গন্ডগোল এড়াতে মোতায়েন করা হয় সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও। শনিবার এমনই ছবি দেখা গেল পুরুলিয়ার ঝালদা এক নম্বর ব্লকের কেনদুয়াডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পুলিশের পাহারায় স্কুলে মিড ডে মিল রান্না।নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার তদারকি করলেন খোদ বিডিও। ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের বিডিও রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, কোনওভাবেই মিড ডে মিল বন্ধ রাখা যাবে না। যদি কেউ মিড ডে মিল বন্ধ করতে আসেন, তিনি আইনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।’’


কিন্তু পুলিশের পাহারায় স্কুলে মিড ডে মিল রান্না করতে হচ্ছে কেন? ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের ইচাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেনদুয়াডি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল সূত্রে খবর, কে করবে মিড ডে মিল রান্না? তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলছে গ্রামের ৮টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মধ্যে। কেনদুয়াডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে রান্নার দায়িত্বে রয়েছে মহাবীর সঙ্ঘ মহিলা সমিতি নামের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। গ্রামে ৮টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও, কেন একটি গোষ্ঠীই মিড ডে মিল রান্নার বরাত পাবে, সেই প্রশ্ন তুলে বিরোধিতায় সরব হয় বাকি ৭টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। ২০১৭ সালে বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় প্রথম থেকে মিড ডে মিল রান্না করে আসা স্বনির্ভর গোষ্ঠী।

স্কুল সূত্রে খবর, সম্প্রতি আদালতের রায় গেছে তাদের পক্ষে। কেনদুয়াডি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে খবর, ২০১৭ সাল থেকে বিরোধী সাতটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীই পালা করে মিড ডে মিল রান্না করছিল স্কুলে। কলকাতা হাইকোর্টের রায় তাদের পক্ষে যাওয়ার পর শনিবার থেকে আবার রান্নার দায়িত্বে ফিরল পুরনো স্বনির্ভর গোষ্ঠী। ওই স্কুলের শিক্ষিকা নীলিমা দে বলেন, “যখন থেকে স্কুলে রান্না শুরু হয়েছে, তখন থেকে সাতটা গোষ্ঠীর সঙ্গে এদের ঝামেলা। প্রথম গোষ্ঠীর পক্ষে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। তারাই আজ থেকে রান্না শুরু করেছে।’’

মহাবীর সঙ্ঘ মহিলা সমিতি সদস্যা খুকিবালা মাহাতো বলেন, “আমরা ২০১৭ থেকে মিড ডে মিল রান্না করছি। গ্রামের অন্য সাতটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। তারাও ঝামেলা শুরু করে, আমরাও রান্না করব। তারপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই। হাইকোর্টে আমাদের হয়েই রায় দেয়, প্রথম থেকে যারা করে আসছে, তারাই করবে। এই রায়ে আমরা খুশি।’’ অন্যদিকে, আদালতে যাওয়ার হঁশিয়ারি দিয়েছে বিরোধী স্বনির্ভর গোষ্ঠী। ইচ্ছামতী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা প্রমীলা মাহাতো বলেন,একটা গোষ্ঠীই কেন রান্না করবে? গ্রামে সাতটা স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। সবাই মিলে রান্না করব। কখন চুপি চুপি কোর্টে গেছে জানি না। এরপর আমরাও কোর্টে যাব।’’

আরও পড়ুন: Chandra Grahan: ১২ বছর পর চন্দ্রগ্রহণে মেষ রাশিতে তৈরি হচ্ছে 'চতুরগ্রহী যোগ', অশুভ প্রভাব ৪ রাশিতে