কলকাতা: রবীন্দ্রভারতীতে (Rabindra Bharati University) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ ও ঘরে তালা লাগানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। গিরিশ পার্ক থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে যেন বিনা বাধায় ঢুকতে পারেন উপাচার্য তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নির্দেশ কার্যকর করে আজ, বুধবারের মধ্যে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্ণাটক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সোমবার থেকে সেই উপাচার্যর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তৃণমূলের ছাত্র এবং অধ্য়াপক সংগঠন। গতকাল, বিক্ষোভে যোগ দেন তৃণমূলের অশিক্ষক কর্মীদের সংগঠন। উপাচার্যর ঘরে লাগিয়ে দেওয়া হয় তালা। গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে উপাচার্য সহ বাকি আধিকারিকরা যেন বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে। বিচারপতি বলেন, "কোনও ব্যক্তির বিক্ষোভ দেখাতেই পারেন, কিন্তু তিনি উপাচার্য বা অন্য আধিকারিকদের প্রবেশ করতে বা বেরোতে বাধা দিতে পারেন না। নির্দেশ বাস্তবায়িত করে বুধবারের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।'' বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্য়ায়। বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন। গতকাল, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি উপাচার্য। টোলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ, করেন উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রশ্রয়েই এই ঘটনা। শুভ্রকমল মুখোপাধ্য়ায় বলেন, "সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা নেই। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পলিটিক্স করার জন্য ঢুকেছে, পড়াশোনা করতে নয়, সেই রকম আছে কিছু, আর কিছু কর্মচারী আছেন, য়াঁরা নিজের কাজ না করে এই কর্মগুলো করে যাচ্ছেন। যারা করছেন আন্দোলন, তাঁরা কোনও একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য, সদস্যা। এবং বড় দুর্ভাগ্যজনক যে, উচ্চ শিক্ষা দফতর এদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাও জুড়েছেন।''
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যর আরও অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, "আমার তো মনে হয় বোধহয়, এখানকার লোকেরা কেউ নিজের প্রতিষ্ঠানটাকে ভালবাসেন না। তাঁরা ভাবেন, দু'হাতে করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা যায়, এদেরকে না দেখলে আমি বুঝতে পারতাম না। না আমি আসব না। আসার পরিবেশটাও নেই, আমি আসব না। আর বাড়ি থেকেও কাজ করব না। এটা হেরিটেজ বিল্ডিং, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে বাড়ি। এদের কি কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই? আমি কী বলব আর!''ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে কিছু বরখাস্ত হওয়া কর্মী গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এর আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সেই মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ।