বিশ্বজিৎ দাস, সুনীত হালদার ও হংসরাজ সিংহ, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর: পাঁচদিনে পড়ল কুড়মিদের (Kurmi) বিক্ষোভ-আন্দোলন (agitation)। তফশিলি উপজাতি (scheduled tribe) তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও মাতৃভাষাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে পুরুলিয়ার (purulia) কুস্তাউর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের (paschim medinipur) খেমাশুলি স্টেশনে রেল অবরোধ অব্যাহত। খেমাশুলিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কেও চলছে অবরোধ। অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কে ট্রাক, লরি, বাসের কয়েক কিলোমিটার লম্বা লাইন। চরম ভোগান্তির (harrasement) শিকার সাধারণ মানুষ।
কী পরিস্থিতি?
গত ২০ তারিখ থেকে চলছে আন্দোলন। তার জেরে পশ্চিম মেদিনীপুরে খেমাশুলিতে পণ্যবাহী মালগাড়ি অবরুদ্ধ। খড়্গপুর-টাটা লাইনে ট্রেন চলছে না। এক ছবি চান্ডিল-আসানসোল লাইনেও। দক্ষিণ পূর্ব রেল সূত্র, এখনও পর্যন্ত আড়াইশো ট্রেন বাতিল হয়েছে। এদিনও বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে হাওড়া-জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনও। সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে বেশ কয়েকটি রুটের ট্রেন। যেমন খড়্গপুর-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ আদ্রাতেই শেষ করা হচ্ছে। এরকম আরও কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ আদ্রাতেই শেষ হচ্ছে। তবে দক্ষিণ পূর্ব রেলের দাবি, রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। বিপর্যস্ত জাতীয় সড়কও। সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে সেখানে। টানা পাঁচ দিন ধরে এভাবে ট্রাক আটকে থাকায় তাতে থাকা বহু জিনিস নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি একটাই, তাঁদের এসটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা হওয়া পর্যন্ত এটা চলবেই। এক ছবি পুরুলিয়ার কুস্তাউরেও। সকাল থেকে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন মহিলা ও শিশুরা। রেললাইনে বিশাল ভিড়। স্লোগান উঠছে ঘন ঘন।
প্রেক্ষাপট...
সূত্রের খবর, অচলাবস্থা কাটাতে গত কাল দুপুর ৩টের সময় আন্দোলনকারীদের বৈঠকে বসার জন্য চিঠি দিয়েছিল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার দফতর। কিন্তু সরকারের সঙ্গে আপাতত কোনও বৈঠক নয়, স্পষ্ট জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনে অনড় বিক্ষোভকারীরা, ফলে দুর্ভোগ মেটার কোনও আশু সম্ভাবনা নেই বলেই ধারণা। অভিযোগ, মিলছে না খাবার, অনেক দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে পানীয় জলও। হাওড়া স্টেশনে আটকে বহু যাত্রী। বাঁচানোর কাতর আর্তি হাওড়া স্টেশনে আটকে পড়া ক্যান্সার রোগীর।
কুড়মিদের রেল ও সড়ক অবরোধ: যেদিকে দু’চোখ যায় ধু ধু প্রান্তর, আশপাশে কোনও দোকান পাট নেই। এমন জায়গায় জাতীয় ড়কের ওপর দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার লরি, ট্রাক, পণ্যবাহী গাড়ি। কুর্মি আন্দোলনের জেরে বিপর্যস্ত সড়ক ও রেল পরিষেবা। চরম ভোগান্তিতে পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার ভোর থেকে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে, ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। আটকে রয়েছে কয়েক হাজার ট্রাক। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে, রাঁচিগামী একের পর এক বাস, দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য ও জলের সঙ্কট। খিদে পেলে কোথায় যাবেন? কোথায় পাবেন পানীয় জলটুকু, জানেন না দীর্ঘপথ পেরিয়ে আসা লরি চালকরা।
ট্রেন বাতিল: কুড়মি আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে রেল পরিষেবার উপর। রেল অবরোধের জেরে শুক্রবারও আপ ডাউন মিলিয়ে ৪০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি ট্রেনের রুট পরিবর্তন করা হয়। রুট সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে আরও কয়েকটি ট্রেনের, এমনটাই রেল সূত্রে খবর। বাতিল হওয়া ট্রেনের মধ্যে আছে, টাটানগর খড়গপুর স্পেশাল, টাটানগর হাওড়া স্টিল এক্সপ্রেস, ঝাড়গ্রাম ধানবাদ এক্সপ্রেস, টাটানগর দানাপুর এক্সপ্রেস, টাটানগর আসানসোল স্পেশাল, হাওড়া বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, চক্রধরপুর টাটানগর এক্সপ্রেস-সহ ৪০টি ট্রেন।
কিন্তু এই ভোগান্তির শেষ কোথায়? কী ভাবে স্বাভাবিক হবে রেল পরিষেবা ও বাকি যান চলাচল? পাঁচ দিন পেরোলেও স্পষ্ট নয় উত্তর।
আরও পড়ুন:১১০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম, দার্জিলিং চা বিক্রি বন্ধ করল গ্লেনারিজ