কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: রাজু ঝা খুনের ১৯ দিন পর প্রথম গ্রেফতার। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গাপুর থেকে গ্রেফতার করা হল অভিজিৎ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে। পয়লা এপ্রিল, শক্তিগড়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয় কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাকে। পরে প্রকাশ্য়ে আসে ঘটনার সময়ের হাড়হিম করা সিসিটিভি ফুটেজ। রাজু ঝা খুনের সময় গাড়িতে ছিলেন ইলামবাজারের পশু হাটের মালিক আব্দুল লতিফ ও রাজুর সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্য়ায়।  পরে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান আব্দুল লতিফ।

  



অভিজিৎ মণ্ডলের বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে। তিনি থাকতেন কাঁকসা থানা এলাকার বহুতল আবাসনে। বাড়ি থেকেই তাঁকে ধরে বর্ধমান থানার পুলিশ। এই প্রথম রাজু ঝা খুনের মামলায় কোনও সন্দেহভাজনকে ধরল পুলিশ। 


'নিখুঁত অপারেশনে' খুন হয়েছিলেন কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা। শক্তিগড়ে রাস্তায় উপর রাজুর গাড়ি ঘিরে পরপর গুলি করেছিল দুষ্কৃতীরা। রাজু ঝা খুনের আততায়ীদের পরিকল্পনা এতটাই নিখুঁত ছিল যে, ব্যালেনো গাড়িটির ইঞ্জিন এবং চেসিস নম্বর নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গাড়িতে যে ৫টি নম্বর প্লেট উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে ৪টির রেজিস্ট্রেশন অন্য কোনও ব্যালেনো গাড়ির নামে। পরে গাড়ির আসল মালিক খুঁজে বের করা হয়। তদন্তে উঠে আসে আরও চমকে দেওয়া তথ্য। আততায়ীদের নীল ব্যালেনো গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর রিকভার করে জানা যায়, গাড়িটি হরিয়ানার গুরগাঁওয়ের বাসিন্দার। দিল্লির জনকপুরী থেকে চুরি যায় গাড়িটি। পুলিশ সূত্রে খবর, এই নীল ব্যালেনো গাড়িটি প্রায় একমাস ধরে ঘুরেছে রানিগঞ্জ, আসানসোল, দুর্গাপুর, বীরভূমে। তারপর এই গাড়ি চেপে শক্তিগড়ে আসে সুপারি কিলাররা।


দিনকয়েক আগে, কয়লামাফিয়া রাজু ঝা খুনের তদন্তে হাজারিবাগ জেলের প্রবেশপথ ও বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য আদালতে আবেদন জানায় SIT. তারপরই এই জল্পনা জোরাল হচ্ছে। আবেদন মঞ্জুরও করেছে বর্ধমানের সিজিএম আদালত। পয়লা এপ্রিল, শক্তিগড়ে ভরসন্ধেয় রাজু ঝার হত্য়ারহস্য সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। খুনের সময়ের CCTV ফুটেজে শার্পশ্যুটারদের দেখা যায়। সূত্রের খবর, শুধুই পেশাদার শার্পশ্যুটাররাই নয়, মনে করা হচ্ছে নেপথ্যে সক্রিয় ছিল উত্তরপ্রদেশ ও বিহারজুড়ে জাল বিছিয়ে রাখা শার্প শ্যুটাররা।


পিছনে ২ গ্যাং?
গোয়েন্দাদের সন্দেহ, খুনের ব্লু প্রিন্ট সাজিয়েছিল ২টো গ্যাং। প্রথম গ্যাং গাড়ি চুরি থেকে রেইকি- যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ করেছে। তারপর অপারেশন করে দ্বিতীয় গ্য়াং। পুলিশ সূত্রে খবর, হাইওয়ে থেকে পাওয়া বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজের সূত্রে জানা গিয়েছে, নীল ব্যালেনো ছাড়াও ব্য়াকআপ হিসেবে আততায়ীদের একটি ব্রেজা গাড়ি ছিল। পুলিশের দাবি, ব্যাকআপ গাড়ি-সহ কিলারদের ব্য়ালেনো রাজু-লতিফদের ফরচুনারের আগে আগেই চলছিল। শক্তিগড়ে খুন করে পালসিট টোল প্লাজার দিকে না গিয়ে বিকল্প রাস্তা ধরে আততায়ীরা। তারপর শক্তিগড় থানার সামনে ব্য়ালেনো গাড়ি রেখে ব্রেজায় চড়ে চম্পট দেয় আততায়ীরা? গোয়েন্দাদের অনুমান, ফের ধানবাদ, দুমকা, হাজারিবাগের দিকে চলে যায় তারা।


আরও পড়ুন: জেলের ভিতরে পার্থ কী করে আংটি পরে আছেন? এবার আদালতে সওয়াল ইডি-র