ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: ব্যস্ততা থাকলেও, শনিবার থমথমে পার্ক সার্কাসের (Park Cicus) লোয়ার রেঞ্জ। গতকাল ভরদুপুরে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন (Bangladesh High Commission Kolkata) থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই এলাকায় ঘটে গিয়েছে হাড়হিম করা ঘটনা। পুলিশ কর্মীর ছোড়া এলোপাথাড়ি গুলিতে (Shootout) প্রাণ গিয়েছে নিরীহ মহিলার। আহত আরও ২ জন। সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন পুলিশ কর্মী চোডুপ লেপচাও। ঘটনার আকস্মিকতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকালের ওই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
গুলিকাণ্ডে জখম ব্যবসায়ীর অস্ত্রোপচার হবে এসএসকেএমে (SSKM)। কলিন স্ট্রিটের বাসিন্দা বসির আলম নুমানি ট্রমা কেয়ার সেন্টারে চিকিত্সাধীন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সার্জারি, কার্ডিও থোরাসিক, ইউরো সার্জারি-সহ ৫ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভর্তি রয়েছেন তিনি। বছর ঊনপঞ্চাশের বসির আলম নুমানির ডান কাঁধের নীচে পিঠের দিকে গুলি লেগেছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
পার্ক সার্কাসে পুলিশ কর্মীর ছোড়া গুলিতে মহিলার মৃত্যুর সিসি ক্যামেরার আরও একটি ফুটেজ এবার এবিপি আনন্দর হাতে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পার্ক সার্কাস লোয়ার রেঞ্জের ওই এলাকায় গুলি চলার পর, আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে দেন স্থানীয়রা। গুলিবৃষ্টির মাঝে পড়ে যান বাইক আরোহী মহিলা। গুলি লেগে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২৮ বছরের রিমা সিংহকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা। মর্মান্তিক সেই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবার এবিপি আনন্দর হাতে।
দশদিনের ছুটি কাটিয়ে বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মী চোডুপ লেপচা। আর শুক্রবারই রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে, তিনি আত্মঘাতী হলেন। কিন্তু, এর কারণ কী? অবসাদেই কি এরকম মারাত্মক কাণ্ড ঘটালেন তিনি? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মাত্র একদিন আগে ছুটি থেকে ফিরে, কাজে যোগ দিয়েছিলেন। একদিন পরই রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে দু’জনকে আহত করে। একজনকে মেরে আত্মঘাতী হলেন মাত্র বছরখানেক আগে কাজে যোগ দেওয়া, কলকাতা পুলিশের কর্মী চোডুপ লেপচা।
কিন্তু, এরকম হাড় হিম করা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কারণ কী? সেটা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই। নিহত এই পুলিশকর্মীর নাম চোডুপ লেপচা। কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর কনস্টেবল। বাড়ি কালিম্পিংয়ে। ১ বছর আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। চোডুপের বাবাও কলকাতা পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
বাবার মৃত্যুর পর চাকরি পান তিনি। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১০ দিন ছুটিতে ছিলেন চোডুপ। বৃহস্পতিবারই ডিউটিতে যোগ দেন। শুক্রবার তাঁর বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে তাঁর ডিউটি ছিল। দুপুরে চা খাবেন বলে রাস্তায় বেরোন ওই পুলিশকর্মী। শুক্রবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে, বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের পাশের বাড়িতে, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখা যায় তাঁকে।
কিছুক্ষণ পর আবার সেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন তিনি। এরপর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় কনস্টেবল চোডুপ লেপচাকে। কাঁধে ছিল এই স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। আচমকাই কাঁধের রাইফেল হাতে নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন তিনি।
যাতে একজনের মৃত্যু হয়। দু’জন আহত হন। কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা জানিয়েছেন, ওই পুলিশকর্মী অবসাদে ভুগছিলেন কিনা দেখা হচ্ছে। নিহত কনস্টেবলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে, তাঁর এই আচরণের কারণ কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।