সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি : কাল রথযাত্রা। আজ থেকেই সেজে উঠেছে মাহেশ। মাহেশের রথযাত্রা এবার পা দিল ৬২৮ বছরে।  প্রাচীনত্ব, মাহাত্ম্য এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়ে পুরীর রথযাত্রার পরেই মাহেশের স্থান।  জগন্নাথ দেবের নব যৌবন উপলক্ষে যেমন সেজে উঠছে পুরী , তেমনই সেজে উঠছে  শ্রীরামপুরের মন্দির।


 শ্রীরামপুরের মাহেশে, স্নানযাত্রার ১৩ দিন পর ভক্তদের দর্শন দেন মহাপ্রভু। শুক্রবার এই নব যৌবন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজ বেশে জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাকে সাজানো হয় এদিন। জগন্নাথদেবকে এই দিন রুপোর হাত পরিয়ে দেওয়া হয়। স্বর্ণালঙ্কারে সেজে ওঠেন দেবতা।  সেই সঙ্গে অর্পণ করা হয় ৫৬ ভোগ।  


কথিত রয়েছে, জগন্নাথ দেব এই দিন জ্বর থেকে সেরে উঠে মহানন্দে থাকেন। দীর্ঘদিন মন্দিরের মধ্যে নিভৃতবাসে থাকার পর এদিনই প্রথম মহাপ্রভুকে দর্শন জন্য মন্দিরের দরজা খোলা হয়। এই নবযৌবন উৎসবের এক বিশেষ মাহাত্ম্য হল, জগন্নাথ দেবের হাত। নবযৌবন উৎসবের দিন জগন্নাথ দেবের শরীরে হাত লাগানো হয়। ভক্তদের বিশ্বাস এই দিন জগন্নাথ দেব রাজ বেশে থেকে সমস্ত ভক্তদের দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেন। এইদিনই জগন্নাথ দেবের শরীরে হাত দেখতে পাওয়া যায়। শুক্রবার মাহেশের নবযৌবন উৎসবের তরজোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল একদম সকাল থেকেই। ভোর সাড়ে ৪ টে মন্দিরের  গর্ভ গৃহের দরজা খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য। 

মন্দিরের সেবাইত তমাল অধিকারী জানালেন, এ দিনেই মহাপ্রভুর চক্ষুদান, প্রাণ প্রতিষ্ঠা ,সম্পন্ন হয়। প্রভু জ্বর থেকে উঠে  প্রথম ভক্তদের সামনে আবির্ভূত হন। এদিন জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা, তিন জনকেই রাজবেশ পরানো হয়। রুপোর হাত রথযাত্রা পর্যন্ত লাগনো থাকে। তারপর আবার উল্টে রথেও লাগানো হয়। জগন্নাথ দেব তার নিজের হাত দিয়েই ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ করেন বলে ভক্তদের বিশ্বাস। 


 


কথিত আছে, সাধক ধ্রুভানন্দ ব্রহ্মচারী ৬২৬বছর আগে পুরীতে গিয়ে প্রভু জগন্নাথকে ভোগ নিবেদনের জন্য স্বপ্নাদেশ পান। কিন্তু শ্রীক্ষেত্রে গিয়েও তিনি ভোগ দিতে পারেননি। শোনা যায়, ফিরে এসে তিনি ফের স্বপ্নাদেশ পান, গঙ্গায় ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরির। তারপর সেই নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয় জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার মূর্তি। নির্দিষ্ট কয়েক বছর পর পুরীতে জগন্নাথ দেবের নবকলেবর হয়। অর্থাত্‍ নতুন করে তৈরি করা হয় জগন্নাথ-বলরাম-শুভদ্রার বিগ্রহ।  কিন্তু মাহেশের মূর্তিগুলিও ৬২৮ বছর আগেকার। তবে আগে কাঠের রথ থাকলেও, লোহার রথ তৈরি হয় ১৩৯ বছর আগে। এটি তৈরি করে মার্টিন বার্ন কোম্পানী।

আরও পড়ুন : 


জগন্নাথ দেবের নেত্র উৎসবে পুরীতে সাজ সাজ রব, নয়া বসনে সাজবেন জগৎপতি