কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, শিবাশিস মৌলিক ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা : তৃণমূলের জন্মলগ্নের আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) ছায়াসঙ্গী। উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতি যার হাতের তালুতে, সেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriyo Mallick) ওপর বারবার সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছে দল। তৃণমূলের ভরাডুবির সময়েও বিধানসভা ভোটে জিতে নেত্রীকে কেন্দ্র উপহার দিয়েছেন তাঁর প্রিয় বালু। রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে এবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গ্রেফতার একটানা ১০ বছর খাদ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পুরনো দিনের সঙ্গী, তৃণমূলের জন্মলগ্নের সৈনিক, রাজ্য সরকারের তিন তিনবারের মন্ত্রী, রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির হেফাজতে।
ছাত্র জীবন থেকেই ধাপে ধাপে রাজ্য রাজনীতিতে উত্থান হয় জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিকের। কংগ্রেসে থাকাকালীন আটের দশক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ছত্রছায়ায় আসেন তিনি। ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্বাচনে তাঁর হয়ে প্রচারে অংশ নেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তখন থেকেই হয়ে ওঠেন নেত্রীর প্রিয় 'বালু'। তার পুরস্কারও পান হাতেনাতে। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর, 'বালু'কে রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
দলের একের পর এক দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। উত্তর ২৪ পরগনার সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে। তাঁকে দেওয়া হয় এই জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব। এরপর উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতির দায়িত্বও পান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি সভাপতি থাকাকালীনই ২০১৬ সালে এই জেলার ৩৩ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩০ টি আসন দখল করে তৃণমূল। উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতির চালচিত্র ছিল তাঁর নখদর্পণে। যদিও তৃণমূলে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি কার্যকর হওয়ার পর ২০২১ সালে জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়।
২০০১ সালে গাইঘাটা থেকে প্রথমবার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০০৬ সালে গাইঘাটা থেকেই ফের নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। এরপর, ২০১১ সালে হাবড়া থেকে বিধানসভা ভোটে জেতেন তিনি। তাঁকে দেওয়া হয় খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। এরপর টানা ১০ বছর খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। আর তাঁর দফতরেই এবার সামনে এসেছে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ। এরপর ২০২১ সালেও ফের একবার হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জেতেন জ্যোতিপ্রিয়। কিন্তু সেবার আর খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেননি মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তাঁকে দেওয়া হয় বনমন্ত্রীর দায়িত্ব। বনমন্ত্রী থাকাকালীনই তাঁকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় এজেন্সি।