সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা : বাদুড়িয়ার পর এবার আমডাঙা। রেশন বন্টন দুর্নীতির (Ration Distribution Scam) তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে বাকিবুর রহমানের বিপুল সম্পত্তির হদিশ। আমডাঙার আধাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের দাদপুর গ্রামে ২০১৬ ও ২০১৮-য় দুটি জমি কিনেছিলেন বাকিবুর। মোট জমির পরিমাণ ১১ বিঘা ৬ কাঠা।


স্থানীয়দের দাবি, বাকিবুরের পরিকল্পনা ছিল, কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পে এখানে FCI-এর গুদাম তৈরির। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্প তৈরি হলে কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দিয়েছিলেন বাকিবুর রহমান (Bakibur Rahman)। গতকাল আমডাঙার সাধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেও বাকিবুরের বিপুল সম্পত্তির হদিশ মেলে। 


প্রসঙ্গত, একাধিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, পানশালা, কর্পোরেট অফিস, একাধিক সংস্থা থেকে দুবাইয়ে জোড়া ফ্ল্যাট। চোখ কপালে তোলার মতো সম্পত্তি খতিয়ান সামনে উঠে এসেচিল আগেই। তারপরে রেশন বন্টন দুর্নীতিতে গ্রেফতার বাকিবুর রহমানের বাদুড়িয়া পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দখল করে নেওয়া জমির হদিশ মেলে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিঘার পর বিঘা জমি হুমকি দিয়ে কম টাকায় লিখিয়ে নিয়েছিলেন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। বাসিন্দাদের দাবি ছিল, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চালকল হলে মিলবে চাকরি। তাও মেলেনি। ঠিক একইরকম চাকরি-প্রতিশ্রতির খোঁজ মিলল আমডাঙায় সম্পত্তি উদ্ধারের পরও। 


রেশন দুর্নীতিতে বাকিবুর রহমানের মতো, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে, ধৃত হুগলির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছিল। ব্যান্ডেলে বাংলো, বলাগড়ে ধাবা, হোম স্টে, গেস্ট হাউসের সামনে বাঁধানো গঙ্গার পাড়। পুরশুড়া, জামালপুরে বেনামে বালি খাদানের খোঁজ মিলেছিল। 


রেশন দুর্নীতিতে ভুরি ভুরি সম্পত্তির হদিশ মিলছে মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ বাকিবুরের। কিন্তু প্রশ্ন হল, কার ছত্রছায়ায় এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন বাকিবুর ? নেপথ্যে কে ? উত্তর মিলবে ? নাকি তা থেকে যাবে অজানাই, সেটাই দেখার। 


এদিকে, ED-র নজরে রয়েছে, ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের ৩টি বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিও। ইউনিকন কমোডিল প্রাইভেট লিমিটেড। গুডলাইফ ডিলার্স প্রাইভেট লিমিটেড। এভারনিউ কমোসেলস প্রাইভেট লিমিটেড। এই তিন সংস্থারই প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন বাকিবুর রহমান। দ্বিতীয় ডিরেক্টর ছিলেন তাঁর আত্মীয় শাহিদুল রহমান। ED সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই চালু হয়েছিল সংস্থাগুলি। আর ৩১ মার্চ, ২০১৯-এ একই দিনে বন্ধ হয়ে যায়। শেষবার AGM হয়েছিল ২০১৮ সালে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনটি সংস্থারই ঠিকানা ছিল এক। উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম। সূত্রের খবর, সংস্থাগুলিকে যে ভুয়ো, তা এই ঠিকানা জানার পরই কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।


আরও পড়ুন- কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করার ৩ কোম্পানিরই মালিক জ্যোতিপ্রিয়, চাঞ্চল্যকর দাবি ইডির