হিন্দোল দে, জয়ন্ত রায় ও বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা : 'কালীঘাটের কাকু' ধরা পড়েছে, এবার কালীঘাটের ডাকু ধরা পড়বে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র গ্রেফতার হওয়ার পর, ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের একদা ছায়াসঙ্গী সোনালী গুহ (Sonali Guha)। এছাড়াও, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর (SujayKrishna Bhadra) বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।


সম্প্রতি, এগরা বিস্ফোরণ রাজ্য রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সেই শক ওয়েভ কাটতে না কাটতেই, এবার বিস্ফোরণ ঘটালেন সোনালি গুহ। 'কালীঘাটের কাকু' সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র গ্রেফতারের পর এবার, তাঁকে নিশানা করলেন সোনালি। 'ডাকু' বলে কাকে নিশানা করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী ?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের ছায়া-সঙ্গী। আন্দোলন হোক কিংবা ধর্না, একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সবসময় দেখা যেত এই সোনালি গুহকে। তৃণমূলে থাকাকালীন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতগাছিয়ার বিধায়ক ছিলেন তিনি।


সম্প্রতি, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সাতগাছিয়ার অন্তর্গত বিষ্ণুপুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা জ্ঞানানন্দ সামন্তের বাড়িতে তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বাড়ির পাশাপাশি, তাঁর গাড়ি এবং বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়েও তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা। কিন্তু, কে এই জ্ঞানানন্দ সামন্ত ? তিনি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারের অন্তর্গত বিষ্ণুপুরের ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সদস্য।


প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ও বিজেপি নেত্রী সোনালি গুহ বলছেন, "আমি চিনতাম আমাদের ওখানে জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন জ্ঞানানন্দ, এখনও আছেন। তিনি অনেকের থেকে নাকি টাকা নিতেন । কী ব্যাপারে টাকা নিতেন ? চাকরি দেবেন বলে !"


তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য পাল্টা বলছেন, "মানুষ যাদের দেখলে রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়, মানুষের ক্ষোভ থাকতে পারে, যদি কারও দুঃখও থাকে দল ছাড়বে কেন ? সোনালী গুহর বারবার যাতায়াত। এখন তিনি বিজেপি সাজতে চাইছেন। বিজেপির লোকেরাই কি তাঁকে বিজেপি ভাবেন ? আমার মনে হয় না। ফলে, ব্যক্তিগত কুৎসা করছেন।"


সোনালীর অভিযোগ, শুধু সাধারণ মানুষই নয়, নিজের ভাইপোদেরও টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন এই জ্ঞানানন্দ সামন্ত। তিনি বলেন, "জ্ঞানানন্দ সামন্তের দুই ভাইপো, তাঁরা যেভাবেই হোক বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁদের দু'জনের চাকরি চলে গেছে। ওঁর ভাইপোদের থেকেও পয়সা নিয়েছেন। সব চাকরি কিন্তু এই সান্টুদার হাত ধরে । সব শিক্ষা দফতরে। জ্ঞানানন্দ নিজের ভাইপোদেরও রেয়াত করেননি। এই টাকা ডাইরেক্ট সান্টুদা মানে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে যেত।"


এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে, তৃণমূল নেতা জ্ঞানানন্দ সামন্ত বলেন, এই বিষয়ে সাতগাছিয়ার তৃণমূল বিধায়ক মোহনচন্দ্র নস্কর কোনও রকম মন্তব্য করতে নিষেধ করেছেন। সাতগাছিয়ার তৃণমূল বিধায়ক এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, "আমি এমএলএ। এমএলএ বলেই যে আমি কাউকে বলব বা বারণ করে দেব সেটা আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আমি বারণ করতে যাব কেন ?"


সব মিলিয়ে, একদা ঘরের লোকই এখন তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।