প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: একটি ডায়েরি। তার রং ধূসর। সেই ডায়েরির প্রতিটি পাতাতেই রয়েছে বিস্ফোরক তথ্য। কারণ সেখানেই রয়েছে কোটি কোটি টাকার হিসেব। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এবার নজর এমনই একটি ডায়েরিতে। সেটি নাকি মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের ডায়েরি। ইডির (ED) দাবি, সেখানেই রয়েছে কুন্তল ঘোষকে দেওয়া কোটি কোটি টাকার হিসেব। রয়েছে কুন্তল ঘোষের সইও। ইডি সূত্রে দাবি এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তাঁর সই বলেও স্বীকার করেছেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। 


পুরনো ডায়েরির ওই পাতাগুলিতেই রয়েছে নিয়োগ-দুর্নীতিকাণ্ডের (Recruitment Scam) কোটি কোটি টাকার হিসেব। কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেই নামগুলি ওই ডায়েরিতে রয়েছে। কবে টাকা দেওয়া হয়েছে সেই তারিখও লেখা হয়েছে। লেখা হয়েছে কোথায় টাকা রয়েছে, সেটাও। এমনকি ডায়েরিতে হিসেব রয়েছে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটাও। টাকার অঙ্কের নীচে গ্রেফতার হওয়া যুব তৃণমূলের রাজ্য় সম্পাদক কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) নামে সই। মহিষবাথানে মিনার্ভা এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নামে অফিস ভাড়া নিয়ে টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার চালাতেন তাপস মণ্ডল। 


কোন ডায়েরি, কত টাকা:
২০২২ সালের ১৫ই অক্টোবর, সেই অফিসে অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডি সূত্রে দাবি, সেখান থেকে উদ্ধার হয় ধূসর রঙের একটি ডায়েরি। সেটির প্রথম পাতাতেই, ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য দেওয়া টাকার হিসেব লেখা রয়েছে। শুধু প্রাইমারির (Primary Recruitment Scam) জন্যই ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে ডায়েরিতে। একেবারে শেষে নীল কালিতে লেখা রয়েছে মোট অঙ্কটা। ইডি সূত্রে দাবি, এই টাকা দেওয়া হয়েছিল যুব তৃণমূলের রাজ্য় সম্পাদক কুন্তল ঘোষকে। কারণ, সেই টাকার অঙ্কের পাশে 'রিসিভড' লেখার নীচে, তারিখ দিয়ে কুন্তল ঘোষের নামে সইও রয়েছে। দ্বিতীয় পাতা রয়েছে আপার প্রাইমারির (Upper Primary Scam) হিসেব। ২০১৯ সালে কখনও দেওয়া হয়েছে ৫০ লক্ষ, কখনও ২৫ লক্ষ, কখনও ১০ লক্ষ টাকা। ডায়েরিতে লেখা তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত, আপার প্রাইমারিতে চাকরির জন্য কুন্তল ঘোষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল মোট ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এখানেও রয়েছে কুন্তল ঘোষের নামে সই। আগেই এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাপস মণ্ডল বলেছিলেন তাঁর কাছে কুন্তলকে টাকা দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে।  


ব্যাঙ্কেও লেনদেন:
শুধু নগদে লেনদেনই নয়। তাপস মণ্ডলের ডায়েরিতে উল্লেখ রয়েছে, ব্যাঙ্কের অনলাইন ট্রানজাকশনের মাধ্যমেও কুন্তল ঘোষের কাছে কোটি কোটি টাকা পৌঁছে গিয়েছিল।


ডায়েরির একাধিক জায়গায় নানা রকমের সই রয়েছে কুন্তল ঘোষের। ইডি সূত্রে দাবি, ডায়েরির এই পাতাগুলি দেখিয়ে কুন্তল ঘোষকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি দাবি করেন, কয়েকটি সই তাঁর হলেও, সবগুলি নয়। এই পরিস্থিতিতে হস্তলিপি বিশারদদের (Hand writing expert) সাহায্য নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। কুন্তল ঘোষ ইচ্ছাকৃতভাবেই বিভিন্ন ধরনের সই করেছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে ইডি। 


আরও পড়ুন: চাষের জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার, কাটা পড়ছে গাছ! ক্ষোভ চাষিদের