সমীরণ পাল ও রাজা চট্টোপাধ্যায়, উত্তর ২৪ পরগনা ও জলপাইগুড়ি : উচ্চমাধ্য়মিক পরীক্ষার্থীদের (Uchha Madhyamik students) শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট (Facebook Post) ! তাতে বারাসাতের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর লিখলেন, তিনি পেশায় শিক্ষিকা। নিয়োগের বছর ২০০৬ ! বাম আমলে তিনি চাকরি পেয়েছেন, উল্লেখ করে, তৃণমূলকে খোঁচা দিতেই কি এমন পোস্ট? চলছে চর্চা। এদিকে, দুর্নীতির দায়ে চাকরি গেছে ধৃত সুবীরেশ ভট্টাচার্যের ২ আত্মীয়েরও। বিয়ের পরদিন চাকরি বাতিলের খবর পেয়েছেন জলপাইগুড়ির এক যুবক !
কোন সালে চাকরি উল্লেখ আসলে খোঁচা তৃণমূলকে ?
চারদিকে মুড়ি মুড়কির মতো ভুয়ো শিক্ষক বেরোচ্ছে ! একটা করে তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে, আর তাতে অযোগ্য়দের ছড়াছড়ি ! পরিস্থিতি এমন দাঁড়াচ্ছে, যে, যাঁরা যোগ্য়তার বলে শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা হয়েছেন, তাঁদের অনেকে রসিকতা করে কিংবা কৌশলে, কোন সালে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তার উল্লেখ করে, বোঝাতে চাইছেন, যে, তাঁরা টাকা দিয়ে কিংবা রাজনৈতিক কানেকশন কাজে লাগিয়ে চাকরি পাননি !
যেমন বারাসাতের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর চৈতালি ভট্টাচার্য। নিজে শিক্ষিকা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানতে গিয়ে, এই পোস্টে তিনি তাঁর চাকরি পাওয়ার বছরের উল্লেখ করেছেন। ২০০৬ সাল। অর্থাৎ তখন রাজ্যের ক্ষমতায় সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার সিপিএম জমানা।
অর্থাৎ নির্দল কাউন্সিলর বোঝাতে চেয়েছেন, এখন ঝুরি ঝুরি কারচুপির অভিযোগ উঠছে, কিন্তু তিনি চাকরি পেয়েছেন সিপিএম আমলে, এখন নয় !
ভোট-প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্য হারিয়েছেন চাকরি
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, চৈতালি যাঁকে ভোটে হারিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন, তিনি তৃণমূলের দোলন বিশ্বাস। হাইকোর্টের নির্দেশে যিনি গ্রুপ সি পদে চাকরি হারিয়েছেন সদ্য ! তারপরই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এই ধরনের কৌশলী পোস্ট করেছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৈতালি! এই বিষয়ে দোলন বিশ্বাসের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এদিকে, উত্তর ২৪ পরগনারই অশোকনগরে একই পরিবারের ২ ভাই চাকরি হারিয়েছেন। বনগাঁর নগেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠে গ্রুপ ডি কর্মী জয়দীপ চৌধুরী এবং গোবরডাঙা লক্ষ্মীপুর স্বামীজি সেবাসঙ্ঘ হাইস্কুল গ্রুপ সি রাজীব চৌধুরী । নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছেন শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তা, সুবীরেশ ভট্টাচার্য তাঁদের অন্যতম ! স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাজীব ও জয়দীপ, এই দু-জন আসলে সুবীরেশ ভট্টাচার্যের আত্মীয় ! এদিন চাকরিহারাদের বাড়িতে গিয়ে অবশ্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
জলপাইগুড়ির চ্যাংমারির প্রণব রায় গ্রুপ ডি পদে কাজ করতেন রাজাডাঙ্গা পেন্দা মহাবিদ্যালয়ে। হাইকোর্টের নির্দেশে ছাঁটাইয়ের তালিকায় ৪৫১ নম্বরে নাম আছে প্রণব রায়ের। ২০১৮ সালে চাকরি পাওয়ার পরে, সদ্য বিয়ে করেন প্রণব। ৯ তারিখ ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। আর, পরদিনই তাঁর চাকরি যাওয়ার খবর আসে। সব মিলিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি সর্বত্র ভয়ঙ্কর ছাপ ফেলছে।
আরও পড়ুন- টলিপাড়া পর্যন্ত গড়িয়েছে দুর্নীতির জল, হাত বদলে মুম্বই পৌঁছে গিয়েছে বনির গাড়িও