সন্দীপ সরকার, বড়ঞা : জীবন মোটেই সুবিধের লোক ছিলেন না। বলছেন তাঁর প্রতিবেশী থেকে গৃহশিক্ষক। প্রথমে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য জাল সার্টিফিকেট বানানো। ওই সার্টিফিকেট দিয়ে অনেকে অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। পরবর্তীকালে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। চাঞ্চল্য়কর দাবি করেছেন জীবনের প্রতিবেশী।


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে বাজার থেকে অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা ! এমনই অভিযোগ। আর এই প্রেক্ষাপটে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তাঁর প্রতিবেশীরাও। জীবনকৃষ্ণ সাহার প্রতিবেশী দর্শনগৌরাঙ্গ মণ্ডল বলেন, প্রথমদিকে শুরু করেছিল ওই সার্টিফিকেট (বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য) জোগাড় করে দিতেন। ওই সার্টিফিকেটের জন্য পয়সা নিতেন অল্প করে। তখন কম পয়সা নিতেন, সেই বিশেষভাবে সক্ষমরা চাকরিও পেতেন। ওইখান থেকেই শুরু হয়।

কেউ তাঁকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন। কেউ আবার নিজে হাতে বড় করেছেন। শিক্ষক থেকে প্রতিবেশী, বেশিরভাগেরই এক কথা। জীবন মোটেই 'সুবোধ বালক' নন। জীবনকৃষ্ণের প্রতিবেশীর দাবি, তৃণমূল বিধায়কের দুর্নীতির হাতেখড়ি অনেক আগেই। প্রথমে জাল সার্টিফিকেট বানানো। সেই সার্টিফিকেট দিয়ে বেআইনিভাবে চাকরি। এই অবৈধ কাজের বিনিময়ে টাকা নিতেন জীবন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে আসার পর দুর্নীতির কলেবরও বাড়তে থাকে।

দর্শনগৌরাঙ্গ মণ্ডল বলেন, কত পুলিশ অফিসার এসে ধর্না দিয়ে পড়ে থাকতেন জীবন সাহার কাছে চাকরির জন্য। কত পুলিশ অফিসার এসে বসে থাকতেন যে, আমার ছেলের চাকরি করে দিন। জানে না ? পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানে না বললেই হবে ? আমাদের আত্মীয়স্বজন এসেছেন। আমি বললাম ভাই, তোমার পয়সা, তুমি মরবে। থাকলে তোমার ব্যাটা চাকরি করবে, আমি জানি না। '১৪-'১৫ সাল থেকে যোগাযোগ করেছে, তখন প্রাইমারি ছিল ৯ থেকে ১০ লাখ। নবম-দশম ছিল ১৬-১৭। আর, আপার প্রাইমারি ছিল ১৩-১৪।

শিক্ষক... তাঁর হাতেই গড়ে ওঠে ছাত্রদের স্বভাব-চরিত্র। কিন্তু ছাত্র জীবনের চরিত্র যে সৎভাবে গড়ে ওঠেনি, তার প্রমাণ তাঁর শিক্ষকের কথাতেই। ধৃত জীবনকৃষ্ণ সাহার গৃহশিক্ষক আনন্দকানন মণ্ডল বলেন, "আমি ছেলে পড়াই। তা আমার সামনে একটা ভাল ছাত্র ঘুরে বেড়াবে, চাকরি পাবে না, আর একটা খারাপ ছাত্র সামনে পয়সা দিয়ে চাকরি পাবে, তখন ভাল ছাত্রটা ভাববে পরীক্ষা দিয়ে আর চাকরি পাব না, অতএব আমাকে যোগাযোগ করতেই হবে।"

অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। তিনি গ্রেফতার হতেই, তাঁর শ্য়ালক নিতাই সাহা যে স্কুলের শিক্ষক, সেই পিয়ারাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসে বাড়তি একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। যাতে কোনওভাবে কোনও নথি লোপাট হতে না পারে।